ভেলোরে হোটেল থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কি?

সাউথ ইন্ডিয়ার  তামিল নাড়ু ( Tamil Nadu ) প্রদেশের একটি জেলা শহর ভেলোর (Vellore ) যেখানে বেশিরভাগ লোকের আনা গোনা উন্নত চিকিৎসার জন্য ।  এখানে সি. এম. সি. (CMC = Christian Medical College ) ও শ্রী নারায়ণী  (Sri Narayani ) হাসপাতাল হওয়ায় প্রচুর রুগীর আগমন এই শহরে । এবং এখানে বেশির ভাগ রুগীই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ । এর আগের এটি পোষ্টে আলোচনা করেছি চিকিৎসার জন্য ভেলোর কিভাবে যাওয়া যায় এই বিষয়ের উপর । আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো ভেলোরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কি । আমি ব্যক্তিগত কারনে এখানে আছি বেশ কিছুদিন ধরে এবং আপনাদের সাথে আমার অভিজ্ঞতা গুলো তুলে ধরছি । প্রথমেই  খাওয়ার ব্যবস্থা আলোচনা করা যাক ।


 

ভেলোরে খাবারের ব্যবস্থা

খাবার জন্য অনেক খাবার হোটেল রয়েছে । তবে  অনেকেই সব হোটেলে খেতে পারবেন না কারন এখানকার স্থানীয় খাবারের সাথে আমরা পরিচিত নই । সাউথ ইন্ডিয়ার বেশির ভাগ খাবারেই কারি পাতা ব্যবহার করা হয় । এবং একটু টক জাতিয় খাবার এরা বেশি পছন্দ করে এবং এদের মসলার ব্যবহারটাও একটু আলাদা । স্থানীয় খাবারের মধ্যে আছে ইটলি, ধোসা পরটা, সাম্বার রাইচ ইত্যাদি ।  অনেকে দই ভাত ও খায় । ইটলি এখানকার প্রধান খাবার যা দেখতে ভাপা পিঠার মত হলেও তৈরি হয় চাল এবং ডালের গুড়ো দিয়ে । আসলে   আসলে এই দিকে তাপমাত্রা বেশি হয়য়ায় এই খাবারগুলোই সাস্থ সম্মত ।

কিছু বাঙালি হোটেল ও পাবেন খাবার জন্য । হোটেল গুলোতে স্থানিয় খাবার ছাড়াও, পরটা, রুটি, মিল (ভাতের সাথে কয়েক প্রকারের সবজি, ডাল থাকে), পুরি, ভাত, মাছ, ডিমের তরকারি পাবেন।  তবে সবগুলোর খাবার খেতে পারবেন কিনা বলা মশকিল 🙂 তবে অন্যপূর্ণা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নামের এক হোটেলে প্রায় পুরোটাই বাঙালি খাবারের স্বাধ পেয়েছি । ৫০ টাকার মিলে আপনি পাবেন সবজি, ডাল, তরকারি, ভাত ইচ্ছে মত। মাছ ডিমের আলাদা চার্জ ।   সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজে রান্না করে খেতে পারেন ।

মিল খাবার, ভাতের সাথে কয়েক প্রকার সবজি ও পাপোড় থাকে

মিল খাবার, ভাতের সাথে কয়েক প্রকার সবজি, ডাল, পাপোড় ও পায়েশ থাকে

রান্নার সরন্জাম পেয়ে যাবেন সহজেই । লজ মেনেজারের সাতে যোগাযোগ করুন, ভাড়াতে পেয়ে যাবেন গ্যাসের চুলা এবং অন্যান্য বাসন পত্র । বেশি দিন থাকার প্রয়োজন হলে কিনেও নিতে পারেন গ্যাসের চুলা এবং অন্যান্য বাসন পত্র। ছোট এবং সহজে বহন যগ্য গ্যাসের চুলা কিনতে পাওয়া যায় এখানে । যাওয়া আসার পথেই পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীও সবজি ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য । গোস খেতে চাইলে আসতে পারেন সাইদাপেট নামোক স্থানে । এখাবে গরু, ছাগল ও মুরগির গোসের বেশ কয়েকটি দোকান আছে। বেশিরভাগই সাইদাপেট এর দিকে । হালাল কিনা এই নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই, সাইদাপেটের গোসের দোকান গুল মুসলিম দ্বারা পরিচালিত ।

Khaja Chicken Center Vellore

Khaja Chicken Center, Saidapet,  Vellore

 

যাওয়া আসার পথে বা লজের পাশের সবজি দোকান গুলোতে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি পড়ে । বড় বাজার কিংবা বৌ বাজারে অনেক রকমের তরি তরকারি ই পাবেন, দামেও কিছুটা কম । ঢেরোস, করল্লা, তরাই (ঝিঙগে) , পুই, পালং শাক, ধনে পাতা, কাচা কলা, সজনা, আলু সহ আরও অনেক রকম সবজিই পাওয়া যায় এখানকার বাজারে ।

রান্নার জন্য কেটে রাখা সবজি, ঝাল পেয়াজ

রান্নার জন্য কেটে রাখা সবজি, ঝাল পেয়াজ

এখানে পোটল সবজিটি নিয়ে অনেকেরই প্রথমবার একটু ঝামেলাতে পড়তে হয় । আশলে পটল এই অন্চলে আবাদই হয়না এবং এলাকার লোকজন ও খায়না । তবে বাজারে পটলের মতই দেখতে কিন্তু আকারে একটু ছোট আর একটি সবজি পাওয়া যায় যা আমাদের এলাকায় খায়না । খুব সম্ভবত এটা তেলাকুচার ফল । তবে পটল ও এখানে পাওয়া যায় যা কলকাতা থেকে আসে ।

চালও আছে বাজারে বিভিন্ন দামের, রেশনের চালগুলো ৫ থেকে ১০ রুপি মতা প্রতি কেজি আর বাসমতি বা অন্যান্য চালগুলোর দাম একটু বেশিই । মোটামুটি ৩৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে ।

পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পানির কিছুটা সংকট । তবে লজ গুলোতে বা হোটেল গুলোতে পর্যাপ্ত পানি পাবেন । সব পানিই খাবার উপযোগী না । পানির জার কিনতে পাওয়া যায় । ২০লিটার পানির জারগুলো মোটামোটি ২৫ থেকে ৪০ রুপি পর্যন্ত ।

এখানে ফলমুলের দামও বেশ কম । কমলা কেজি ২০ টাকা থেকে শুরু, আংগুর ৫০, আনার ১২০ । সকালের নাস্তার জন্য মুড়িও কিনে পাবেন 🙂

ভেলোরে থাকার ব্যবস্থা – ভেলোরে হোটেল

অন্যান্য শহরের মতো এখানোও থাকবার জন্য অনেক হোটেল পাবেন । পাবেন কিছু লজ ও । বেশি দিন থাকতে হলে বাড়ি ভাড়াও নিতে পারেন । লজ/হোটেলগুলো ১৫০ থেকে ৬০০ – ৭০০ পর্যন্ত প্রতিদিন হিসেবে ভাড়া পাওয়া যায় ।  সিএমসি হাসপাতালের সামনে ও এর আশেপাশে প্রচুর হটেল ও লজ আছে । এখানে এখন অনেক বাঙালির আনা গোনা হওয়ায় অনেক বাঙালি লজ/হোটেল ও হয়েছে । তবে যে হটেল বা লজেই উঠুন না কেনো পেমেন্ট এর স্লিপ গুলো নিয়মিও সংগ্রহ করুন । পরবর্তি ঝামেলা এড়াতে এগুলো কাজে দেবে ।

সাইদাপেট নামক স্থানটিতে ( সিএমসি থেকে একটু দুরে, পায়ে হাটা ১০ মিনিটের পথ ) লজ/ হোটেল ভাড়া কিছুটা কম এবং এখানে লোক জনের ভিড়ও কিছুটা কম । ছাদ থেকে দেখতে পাবেন পাহাড় । আমরা ছিলাম Kaanar Mosque Street ও Sarkar Mundy Street এর মিলিত স্থলের এক লজে ।

Hills of Vallore

Hills of Vallore

হোটেল বা লজ চুজ করবার সময় একটু খোলামেলা লজ/হোটেলগুলো বেছে নেয়াই ভালো । এখানকার বেশির ভাগ হোটেল বা লজ এ জানালার সংখ্যা কম । একটু খোলামেলা পরিবেশ দেখে নিলে ভালো হয় ।

ভেলোরে এলে আপনাকে একবার স্থানিয় থানায় যেতে হবে । আপনি যে এখানে এসেছেন এবং কোন হোটেল / লজ এ থাকছেন তার ডকুমেন্ট তারা নেবে আপনার কাছ থেকে ।  Form – C ( সির্ফম নামেও পরিচিত  ) করতে হবে এখানে এবং এটা লজে ওঠার পর ।  লজ বা হোটেল এর লোকেরাই আপনার Form –  C করে দেবে এবং কিছু টাকা নেবে Form টা করার জন্য ( ৫০ থেকে ১৫০ লজ/হোটেল ভেদে ) ।

স্থানীয় লোকজন বেশ ভালোই এবং যথেস্ট সত, মেরে খাই এমন ভাব নেই এদের মাঝে । তবে বাঙালির সংস্পর্শে এসে কারো কারো একটু পরিবর্তন এসেছে ।  অনেক স্থানীয় মুসলমান এখানে। দক্ষিন ইন্ডিয়ার মানুষ এমনিতে ভালো হলেও খেপে গেলে বা রেগে গেলে বেশ ক্ষেপাটে হয়ে ওঠে ।

hotel in vellore near cmc

এখানে বাসা ভাড়াও পাওয়া যায়, তবে সেগুলো সি এম সি থেকে কিছুটা দুরে ।   ভাড়া ৩০০০ থেকে ৭০০০ – ৮০০০ হাজার । একটু খুজে নিতে হবে ।

আপনারা চাইলে শ্বপন দাদার ( +৯১ ৯৮৯৪২৯৪২৬৭ ) সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা ওনার লোজেই ছিলাম অনেকদিন  । অথবা ফায়াজ ভাই ( +৯১ ৯০৯৫৭৬৮৮৭৪ ) এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, অনেক কম দামে পেয়ে যাবেম রুম ভাড়া আশা করা যায় থাকা খাওয়া সহ অনেক ব্যাপারেই সে আপনাদের সাহায্য করতে পারবে । উনি কলকাতার মানুষ এবং ভেলরে আছেন অনেকনিন ধরে ।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!