কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায়

আপনি কি সব সময় এলোমেলো অবস্থায় থাকেন? আপনি কি নিজেকে সাজিয়ে নিতে চান?

কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায়

অপি করিম একজন রুচিশীল উপস্থাপিকা

যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের মাঝে প্রতিভা থাকলেও তার মুল্যায়ন হয় না। আপনারই  কোন সহকর্মী আপনার থেকে কম প্রতিভা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র তার  বচন-বাচন, সাজ-সজ্জা ও সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে আপনার চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন প্রভাবশালী। যদিও তার অন্তঃসার শুন্য তবুও আপনার উর্ধতন কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে আশাবাদী। কিন্তু তাকে দেখে আপনার কাছে একটি প্রবাদ মনে হতে পারে যে ‘ উপরে ফিট ফাট ভিতরে সদরঘাট’ অথবা  ‘Empty vessel sound much.’


আচ্ছা বলুন তো এতে কি আপনার কোন দুর্বলতা  নেই? আমি বলি অবশ্যই  আছে। কারন আপনি ভেতর থেকে বেশি স্মার্ট হলেও আপনার প্রকাশ ভঙ্গিমায় দুর্বলতা আছে। আর এই কারনেই অযোগ্য লোকেরা পেয়ে যায় যোগ্য লোকের স্থান।

 

আসুন জেনে নিই কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা যায়।

নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা কে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করি। একটি হল বাহ্যিক ভাবে উপস্থাপন আর অন্যটি হলো ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা। আসলে  এ প্রতিযোগীতার  সময়ের সবাই নিজেদের সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে চায়। চায় নিজেদের কথা বার্তা এমনকি নিজেদের চলাফেরাতে আধুনিকতা প্রকাশ। উপর্যুক্ত দুটো ভাবে যদি কেউ গুছিয়ে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সফল হয় তারা এ জগতে দুটি পুরস্কারে ভুষিত হয়। একটি হলো মুল্যায়ন ও সন্মান।

 

বাহ্যিক ভাবে  নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা

নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারার পূর্ব শর্তই হল বাহ্যিক ভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। নিচে এ সম্পর্কে কিছু দিক তুলে ধরা হলঃ

পরিমার্জিত শারীরিক ভাষা সম্পর্কে জানুনঃ

আপনি পরিশীলিত হতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে নিজেকে সবার সামনে গুছিয়ে উপস্থাপন করার কৌশল। নিজেকে অত্যাধুনিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে জানতে হবে নিজের দৈহিক অঙ্গভঙ্গি সম্পর্কেও। কথা বলার সময় অপর মানুষের চোখে চোখ রাখতে শিখুন, অনর্থক হাত নাড়ানাড়ি বন্ধ করুন, সোজা হয়ে চলাফেরা করুন আর নিজের মুখের কমনীয়তা বজায় রাখুন।

 

নিজের চেহারায় রুচিশীলতা প্রকাশ করুন

আপনি আপনার চেহারা সঙ্গে বর্তমান এবং প্রচলিত একটি ধাঁচ আনতে আপনার চেহারায় পরিবর্তন আনুন। প্রথমে চুল সাজিয়ে ফেলুন,বর্তমান সময়ের সাথে যায় এমন কোন হেয়ার স্টাইল করতে পারেন। আপনার চুল হাইলাইট করতে আপনার চেহারার সাথে যায় এমন কোন হেয়ার কাট নিতে পারেন। পুরুষরা আধুনিক দেখাতে তাদের মুখমণ্ডল ফ্রেস রাখুন। আর নারীরা হালকা মেকাপে থাকতে পারেন।

 

সময় উপযোগী মানানসই পোশাক পরুন

নিজেকে আধুনিক দেখাতে অবশ্যই আধুনিক পোশাক পরুন। হাল ফ্যাশানের পোশাক সম্পর্কে ধারণা রাখুন। নিজের সাথে মানানসই এমন পোশাক পরিধান করুন। দামী কাপড় পরলেই যে আপনাকে ভালো দেখাবে এমন ধারণা ভুল। যাই পরবেন খেয়াল রাখুন সেটা যেন পরিষ্কার পরিছন্ন হয়। মনে রাখবেন কেবল মাত্র একটি কালো শার্ট বা একটি জিন্সেই আপনাকে আধুনিক দেখাবে যদি আপনি সেই পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

 

রুচিশীল এক্সেসারিজ ব্যবহার করুনঃ

রুচিশীল এক্সেসারিজ আপনাকে আধুনিক করতে সাহায্য করবে। যেমন গাঢ় রঙের বেল্ট,একটি সানগ্লাস,ভালো ব্র্যান্ডের কোন ঘড়ি আর মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি স্কার্ফ আর সাথে হালকা কিছু সোনার, রুপার অথবা স্টাইলিশ ইমিটেসন জুয়েলারি আপনাকে দেবে আলাদা একটি রূপ।

 

ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা

শুধু বাহ্যিকভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজেকে সম্পুর্ন সুন্দরভাবে প্রকাশ করা যায় না। ভেতর থেকে নিজেকে সাজিয়ে নিতে হয়।

 

অন্যরা অস্বস্তিবোধ করে এমন আলোচনা থেকে বিরত থাকুনঃ

এমন যেকোন আলোচনা থেকে বিরত থাকুন যাতে মানুষ বিরক্তি বা অস্বস্তিবোধ করে। পরিশীলিত শব্দ ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা করুন। নিজের টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করুন। অন্যের বেতন, তার সামর্থ্য এমনকি তার খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলুন।

 

একাধিক ভাষার মিশ্রণে কথা বলা থেকে বিরত থাকুনঃ

অনেক বাংলা এবং ইংরেজির সংমিশ্রণ এ কথা বলাকে আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ মনে করেন। আসলে তা কিন্তু নয়। সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে যেকোন একটি ভাষায় সুন্দর করে কথা বলতে পারার মাঝেও কেবল আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ পায়। তাই সচেতনার মাধ্যমে কেবল একটি ভাষায় কথা বলুন। আবার যেক্ষেত্রে অন্য ভাষা সর্বজন স্বীকৃত, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সে ভাষায় ব্যবহার করতে হবে। যেমন গণনাকারী যন্ত্র না বলে বলতে হবে কম্পিউটার।

আত্মসমালচনার মাধ্যমে নিজেকে চেনাঃ

নিজেকে চেনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল আত্মসমালচনা করা। আত্মসমালচনা শব্দটির অর্থ হলো নিজের সমালোচনা করা। একজন মানুষ যখন নিজের ভালো দিক ও খারাপ দিক বুঝতে পারে তখনই সে নিজের পরিবর্তন করতে পারে। তাই আত্মসমালোচনা মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটিগুলো ধরুন ও সংশোধন করার চেষ্টা করুন। তাহলে নিজেকে আরও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

 

ধ্যানের মাধ্যমে নিজের মনস্তাত্বিক পরিবর্তন সাধনঃ

ধ্যান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Meditation. যে চিন্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের মন বা আত্মাকে নিয়ন্ত্রন ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাই হল ধ্যান। এর সাথে মনযোগীতা বিষয়টিও জড়িত। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুলত্রুটিগুলো যেমন ধরা যায়, তেমনি ধ্যানের মাধ্যমের এর সংশোধন বা পরিশুদ্ধকরন সম্ভব। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমরা হীনমন্যতা, নেতিবাচক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব।

 

বিনয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কে কথা বলুনঃ

নিজের সম্পর্কে বলার প্রয়োজন দেখা দিলে কোন আস্ফালন ছাড়াই শান্ত থেকে বিনয়ের সাথে নিজেকে তুলে ধরুন। আপনার গুণাবলী সম্পর্কে অন্যকে জানাতে পরিশীলিত শব্দ চয়ন করুন আর সেই শব্দের প্রয়োগ করুন। এটি নিজেকে উপস্থাপনের একটি সুন্দর মাধ্যম।

মেজাজের ভারসাম্যতা

মানুষের মেজাজ সবসময় এক থাকে না। কিন্তু যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করেন তাদের মেজাজের উপর দখল থাকবে অনেক বেশি। সেজন্য কিছু না কিছু প্রাকটিজ অর্থাৎ অনুশীলন দরকার। যোগ ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। কাজ না হলে মেডিটেশন পদ্ধতির আশ্রয় নিন।

 

খারাপ অভ্যাস

অনেকেরই খারাপ কিছু অভ্যাস থাকে। এসবের কারনে তারা নিজেদের অবস্থান হারিয়ে ফেলেন। যেমন- নেশাভান করা, নারী বা পুরুষের প্রতি দুর্বলতা, উৎকট পোশাক ব্যবহার, অশোভন কিছু করা ইত্যাদি। যত দ্রুত পারা যায় এসব বাদ দিতে হবে। তা না হলে  নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা  যায় না।

 

রুচিশীল কাজ করা

গান শোনা, বই পড়া, কিংবা ভাল মুভি দেখা, চিত্র কর্ম , সামাজিক সহযোগীতা, স্বেচ্ছাসেবিক কার্যক্রম ইত্যাদি একজন মানুষের রুচিশীলতার করে পরিচয় বহন করে। যে যত বেশি নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে সে তত বেশি রুচিশীল কাজ করেন।

 

সৎ এবং সত্যবাদী

লোকেরা আজকাল এই অংশটি বাদ দিয়েই উপরে উঠতে চান। দেখলে হাসি পায়। যারা নির্ভিক তারাই হয় সৎ এবং সত্যবাদী। যে নিজের অন্যায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেন তারাও মিথ্যাবাদী। তাই সত্যবাদী হওয়াটা আবশ্যক। একজন মিথ্যাবাদী মানুষ যতই স্মার্টনেস অর্জন করুক না কেন, স্থায়ী হন না বেশি দিন। সৎ মানুষের কথা অনেকদিন মানুষ মনে রাখেন।

উপর্যুক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন দেখবেন আপনার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দর উপস্থাপনা  কেউ সাথে নিয়ে জন্মায় না, এটাকে অর্জন করতে হয়।

আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনাদের ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকেও জানান । সবায় সুন্দর ও সুস্থ থাকুন এই কামনা রইলো…

 

You may also like...

4 Responses

  1. শাওন says:

    ভালো লাগলো উপস্থাপনার সুন্দর লেখাটি।

  2. মো মোমিনুর ইসলাম says:

    অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা, আমার মন ছুয়েছে , আমি এই কথা গুলো মানার চেষ্টা করবো

    • Md Shariar Sarkar says:

      জেনে ভালো লাগলো, আপনাদের ভালো লাগাই আমাদের সামনে এগুনোর গতি বাড়িয়ে দেয় 🙂

  3. সালাহউদ্দিন says:

    অনেক ভাল লাগলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!