কীভাবে ব্যাংক এর সৃষ্টি হল? কিভাবে আমাদের দেশে ব্যাংক হল?
ব্যাংকিং নিয়ে আমরা সবাই কম বেশি কিছু জানি। দেশে তালিকাভুক্ত ব্যাংক আছে প্রায় ৬১টি । এছাড়া তালিকার বাইরে ব্যাংক রয়েছে ৫টি। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদি। অন্যদিকে ব্যাংকের কমন ব্যবসা হল আমানত গ্রহন ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন ও বন্টন। কিন্তু প্রায়শই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে কীভাবে ব্যাংক এর সৃষ্টি হল? কীভাবেই তা আমাদের দেশে প্রচলিত হল বা কখন থেকে আমাদের দেশে প্রচলিত হল। জানার জন্য হলেও আমাদের এই বিষয়েও কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। তাই চলুন আজ আমরা জানার চেষ্টা করি ব্যাংক সৃষ্টির ইতিহাস এবং কোথায় কিভাবে হল তা সম্পর্কে।
কিভাবে ব্যাংক এর সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে সঠিক কোন ইতিহাস বা নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয় এ সংক্রান্ত বাণিজ্যের উৎপত্তি ইতালী থেকেই হয়েছে।
ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
ইংরেজি Bank শব্দের উৎপত্তি নিয়ে কিছু দ্বিধা বিভক্তি আছে।
তবে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মতবাদ অনুসারে ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি মূলত ইটালিয়ান শব্দ থেকে।
Banco, Bancus, Banca, Bangk ইত্যাদি নাম থেকে Bank শব্দের উৎপত্তি।
এর বাংলা অর্থ দাড়ায় নদী বা জলাশয়ের তীর, অথবা টুল বা বেঞ্চ, অথবা ধনভান্ডার বা ধনস্তুপ।
মধ্যযুগের সময়টাতে ইতালীর শহরগুলোতে এক নতুন ধরনের ব্যবসার আবির্ভাব হয়।
একদল লোক টুল বা বেঞ্চে বসে টাকার ব্যবসা করতো।
আবার খ্রীষ্টের জন্মের পূর্বে জেরুজালেমের ইয়াহুদিরাও টাকা ঋণ দেবার ব্যবসা করত।
এখনকার যুগের মহাজনী কারবারের মতই ছিল সে সকল ব্যবসা।
অনেকেই ধারনা করেন যে হয়তো তখন থেকেই ব্যাংকের উৎপত্তি।
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠায় কাদের অবদান রয়েছে
ব্যাংকিং প্রথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে স্বর্ণকাররা।
তখনকার সময়ে মানুষ স্বর্ণকারদের কাছে তাদের অর্থসম্পদ বা টাকা গচ্ছিত রাখতো।
স্বর্ণকাররা টাকা জমা ও প্রদান করার সময় রশিদ প্রদান করত।
এমনকি গচ্ছিত সম্পদের ব্যবহার করে তারা যে মুনাফা পেত সেখান থেকে জমাকারীকে মুনাফা প্রদান করত।
মহাজনী কারবারি বা ঋণপ্রদানকারী ব্যাক্তিগণও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
তারা মানুষকে প্রথমত স্বাভাবিকভাবে মজুদের অতিরিক্ত টাকা ঋণ দিত।
পরবর্তীতে তারা এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।
ব্যাবসায়ীরাও খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
তারা লোকজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে বাণিজ্য করতো।
সেখান থেকে তারা প্রত্যেককে মুনাফা প্রদান করতো।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাবসায়ীরাও ছিলেন সততা ও বিশ্বাসের প্রতীক।
আধুনিক ব্যাংকের উদ্ভব
ধারণা করা হয় ১৬০৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত Bank Of Amsterdam ই প্রথম সত্যিকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর লন্ডন শহরের উপকন্ঠে স্থাপিত হয় Bank Of England, ১৬৯৪ সালে।
উইলিয়াম প্যাটারসন নামে এক ব্যবসায়ী এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর থেকেই ব্যাংকিং জাতীয় প্রতিষ্ঠান এর ক্রমাগত বৃদ্ধি হতে থাকে।
আধুনিক ব্যাংক হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৬৮ সালে।
Stolkhom এ অবস্থিত এই ব্যাংকের নাম Svingss Pis Bank.
দক্ষিণ এশিয়াতে একটি বিশেষ ল্যান্ডমার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় যখন Hindustan Bank প্রতিষ্ঠিত হয়।
কলকাতা শহরে ১৭৭০ সালে স্থাপিত হয় এটি।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা
সর্বপ্রথম ১৮৪৬ সালে Dacca Bank প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকায় যা দেশের প্রথম আধুনিক ব্যাংক।
পরবর্তীতে Bank Of Bengal এটিকে কিনে নেয়।
১৮৭৩ সালে Bank Of Bengal সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামে শাখা খোলে।
পরবর্তীতে ১৯০০ সালে চাঁদপুরে তারা আরও একটি শাখা খোলে।
দেশ বিভাজন পরবর্তী প্রায় সকল ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরকম সময়ে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইষ্টার্ণ মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্টার্ণ ব্যাংকিং কর্পোরেশন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ১২টি বিদেশী নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক সহ ১৭টি ব্যাংক ছিল।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দুটি শাখা ছিল বাংলাদেশে।
পরবর্তীতে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নাম পাল্টে করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
যা আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
Thanks for the Bank History of Bangladesh 🙂