কীভাবে ব্যাংক ঋণে জামানত প্রদান করা হয় : জামানত ও জামিদার
যে কোন প্রকারের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রথমেই জামানত ও জামিনদার এর বিষয়টা আসে। জামিনদার বা জামানত ব্যাতীত কোন ব্যাংকই লোন বা ঋণ প্রদান করবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব সময় তাদের বিনিয়োগকে নিরাপদ করার জন্য চেষ্টা করবে। আর নিরাপদ করার জন্য প্রতিষ্ঠান গ্রাহক কে ট্রেস করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে কীভাবে ব্যাংক ঋণে জামানত প্রদান করা হয়, জামিনদার এর কাজ কি, প্রয়োজন কি, ঝুকি কি তা জানতে হবে। তাই আজ আমরা চলুন জানার চেষ্টা করি কীভাবে ব্যাংক ঋণে জামানত প্রদান করা হয় কিংবা তাদের প্রয়োজনীয়তা, ঝুকি ইত্যাদি।
জামানত বা গ্যারান্টি কি
জামানত (Guarantee) শব্দটি নির্ভর করে কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তার উপর।
তবে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে জামানত হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের নিশ্চয়তা প্রদান।
অথবা বলা যায়, ঋণ প্রদানের জন্য যে সকল ব্যক্তি ও সম্পদের সুপারিশ বা সমমূল্যযোগ্যতা জমা রাখা হয় তাকে জামানত বলা হয়।
সম্পদ বলতে যে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ বোঝানো হয়।
তবে ব্যক্তির ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে বোঝায়।
যে বা যারা গ্রাহকের পক্ষে ঋণ প্রদানের জন্য সুপারিশ করে।
জামিনদার বা গ্যারেন্টার কি বা কারা
জামিনদার বা গ্যারেন্টার(Guarantor) বলতে তৃতীয় এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে বোঝায়।
যারা গ্রাহকের পক্ষে গ্রাহক কে ঋণ প্রদানের জন্য ব্যাংকের নিকট সুপারিশ করে থাকে।
তবে এ সুপারিশ মৌখিক আকারে হয় না।
সুপারিশ হতে হয় লিখিত আকারে।
সেই সাথে তারা সেখানে গ্রাহকের দায় দায়িত্বও নিয়ে থাকেন।
ব্যাংকিং সেক্টরে একে গ্যারেন্টার নামে অভিহিত করা হয়।
জামিনদার বা গ্যারেন্টার এর গুরুত্ব
আসলে জামিনদার বা গ্যারেন্টারের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়।
বরং গ্যারেন্টারের গুরুত্ব ঋণ গ্রহীতার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
তাই কোন লোনের গ্যারেন্টার বা জামিনদার হবার আগে ভালো ভাবে ভেবে নিন।
সাধারণত ঋণ আবেদন পত্রে গ্যারেন্টারের পূর্ণ ঠিকানা ও ছবি প্রদান করা হয়।
যেন গ্যারেন্টারকে সহজেই খুজে বের করা যায় এবং পাওয়া যায়।
গ্যারেন্টার হচ্ছে একজন গ্রাহককে খুজে পাবার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম্।
অচেনা কেউ কখনোই আপনার গ্যারেন্টার হবে না।
আবেদন পত্রের হলফ নামায় যেখানে গ্যারেন্টারের সই থাকে সেখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে যে কোন কারণে গ্রহীতা ঋণের টাকা ফেরত না দিলে তা গ্যারেন্টার বহন করবে।
এছাড়া একজন গ্যারেন্টার যখন কোন গ্যারান্টি পত্রে স্বাক্ষর দেন তার মানে হল তিনি সেই ঋণের সকল প্রকার ঝুকি নিজের কাধেঁ তুলে নিয়েছেন।
অন্যদিকে আপনি কোন ঋণের গ্যারেন্টার হচ্ছেন তার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর যাবে এবং ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর রিপোর্টে তা এন্ট্রি হয়ে থাকবে।
পরবর্তীতে আপনি নিচে কোন ঋণ নিতে গেলে তা সামনে উঠে আসবে।
একাধিক ঋণের গ্যারেন্টার হলে আপনি নিজের ঋণের জন্য গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন।
এমনকি বেশিরভাগ সময়ে ঋণ প্রদানের সময়কালে গ্যারেন্টারের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখা হয় যেখানে স্পষ্টতই উল্লেখ থাকে যে ঋণের ধারাবাহিকতার ব্যত্যয় ঘটলে বা ঋন খারাপ হলে তার দায়ভার গ্যারেন্টার নিবেন এবং তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবেন।
কারা গ্যারেন্টার হতে পারবে
গ্যারেন্টার চাইলে যে কেউ হতে পারবে তা মোটেও সঠিক নয়।
যেকোন ঋণের বীপরীতে গ্যারেন্টার হতে হবে শক্ত সমর্থ।
যার মানে করলে দাড়ায় গ্যারেন্টার হতে হবে এমন ব্যক্তি যার সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঋণ গ্রহীতার চেয়েও বেশি।
সাধারণত ঋণের বেলায় ১ম গ্যারেন্টার হতে হয় নিজের পরিবারের কেউ।
বিশেষ করে বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ইত্যাদি।
এর বাইরে যারা গ্যারেন্টার হতে পারে তারা হল যেকোন ব্যবসায়ী, সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইত্যাদি।
কিন্তু অবশ্যই তা ঋণ গ্রহীতার চেয়ে শক্ত হতে হবে।