কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান
ভ্রমণ পিপাসু হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলা ও হতে পারে আপনার জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার । দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ধুবড়ী জেলা ও দক্ষিণ শালমারা মানকার চর জেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা অবস্থিত।
কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান সমু্হ
কুড়িগ্রাম জেলার রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে অন্যতম-
- চান্দামারী মসজিদ,
- শাহী মসজিদ,
- চণ্ডী মন্দির,
- দোলমঞ্চ মন্দির,
- ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি,
- চিলমারী নদী বন্দর, ব্রহ্মপুত্র নদী
- মোগলবাসা ভাটলার সুইচগেট,
- ধরলা ব্রিজের পাড়- পিকনিক ষ্পট,
- ঘোগাদহ বাজার
সহ আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান । চলুন একে একে জেনে নেয়া যাক কুড়িগ্রাম জেলা -র দেখার মতো জায়গা গুলো ।
চান্দামারী মসজিদ, কুড়িগ্রাম
চান্দামারি মসজিদের অবস্থান কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়ায়। চান্দামারী মসজিদ সড়কপথে রাজারহাট উপজেলা থেকে ৪ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম এ অবস্থিত। মোগল আমলের এই তিন গম্বুজ ও তিন মিহরাব বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক ১৫৮৪-১৬৮০ খ্রিটাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে।
সুলতানী আমলের শিল্প বৈশিষ্ট্য ও মোগল স্থাপত্যকলার সমন্বয় ঘটেছে।
কিভাবে যাওয়া যায় চান্দামারি মসজিদ:
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম বাস স্ট্যান্ড এ নেমে অটো রিক্সা যোগে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কাছে গিয়ে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে মসজিদটি।
কুড়িগ্রাম জেলার শাহী মসজিদ
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে ১ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে ব্যাপারীপাড়া শাহী মসজিদ অবস্থিত। কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এই মসজিদটি একটি । মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট প্রস্থ ১০ ফুট। চারপাশে ৩ ফুট উঁচু প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত । মসজিদের সামনে ৩টি দরজা। একটি সুদৃশ্য প্রবেশ তোরণ, ০২টি মিনার এবং চার কোণায় ৪টি উচুঁ মিনার আছে । মসজিদের মিনারগুলোর পাশে আরো ৮টি ছোট মিনার আছে ।
ছাদের মাঝখানে ৩টি বড় আকৃতির গম্বুজ আছে। মসজিদের কোন শিলালিপি নেই তবে মোগল স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত মসজিদটি ২০০ বছরের পুরাতন বলে অনুমান করা যায় ।
মসজিদের সামনে একটি দিঘি আছে ।
কিভাবে যাওয়া যায় শাহী মসজিদ :
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো(ইজি বাইক) যোগে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এসে জিজ্ঞাস করলেই পাওয়া যাবে শাহী মসজিদ।
চন্ডিমন্দির
চন্ডিমন্দির কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিমি পূর্বদিকে ধামশ্রেণী নামক সহানে অবস্থিত। মন্দিরটি মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৮-১৭০৭) নির্মিত বলে একাধিক ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। মন্দিরটি দেখতে অনেকটা কালীমন্দিরের ন্যায়।
১৮৯৭ এর ভূমিকম্পে এটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রসহ হয়। এখানে নতুন একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। এখানেই ছিল বাহারবন্দ পরগণার সদর দপ্তর এবং জমিদার ছিলেন রাণী সত্যবর্তী। ধামশ্রেণীতে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির নামে আরেকটি মন্দির অবস্থিত।
কিভাবে যাওয়া যায়:
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো(ইজি বাইক) যোগে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এসে জিজ্ঞাস করলেই পাওয়া যাবে চণ্ডী মন্দির।
দোলমঞ্চ মন্দির, উলিপুর
দোলমঞ্চ মন্দির কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিঃমিঃ পূর্বদিকে ধামশ্রেণী নামক সহানে অবস্থিত। জমিদার রাণী সত্যবর্তীর (১৬৫৮-১৭৮৭খ্রি.) নিযুক্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিতের গৃহ প্রাঙ্গণে সহাপিত এই মন্দিরটি এখন ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। এ সহানে আরো কয়েকটি মন্দির আছে যেসব ১৮৯৭’র ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রসহ হয়।
কিভাবে যাওয়া যায়:
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো(ইজি বাইক) যোগে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে এসে জিজ্ঞাস করলেই পাওয়া যাবে দোলমঞ্চ মন্দির।
ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি
কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ভেতরবন্দ জমিদারবাড়ি ১৬ কিমি দূরে নাগেশ্বরী উপজেলার ভেতরবন্দ ইউনিয়নের ভেতরবন্দ গ্রামে অবস্থিত। ভেতরবন্দ গরগণার সদর দপ্তর ইংরেজ আমলের শুরুর দিকে ছিল রাজশাহীতে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অব্যাহতির পরেই ভেতরবন্দ পরগণার সদর দপ্তর নাগেশ্বরী উপজেলার ঈেতরবন্দে স্থানান্তর করা হয় । জমিদারবাড়ির অর্ধেক অংশ কাঠ নির্মিত ছিলো যা এখন আর নেই ।বাকি অর্ধেকটা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহ্নত হচ্ছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো(ইজি বাইক) যোগে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিওনের সামনে এসে জিজ্ঞাস করলেই পাওয়া যাবে ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি।
চিলমারী নদী বন্দর, ব্রহ্মপুত্র নদী
কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ৩৫ কিমি দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। ব্রহ্মপুত্র নদের এবং চিলমারি বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম । পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম নদ এই ব্রহ্মপুত্র নদ । চিলমারি বন্দরকে নিয়ে আব্বাস উদ্দীনের বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান আজও বাংলার লোকসঙ্গীতের সম্পদ। ব্রিটিশ আমলে এই চিলমারী বন্দর সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদী দিয়ে চলাচল করতো বড় বড় জাহাজ। নদীর নাব্যতা হ্রাসজনিত কারণে বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । কেবল নৌপরিবহন ব্যবসহাটিই টিকে আছে এখনও। সীমিত আকারে হলেও বন্দর বর্তমানেও ব্যবহ্নত হচ্ছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রাম জেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর অটো(ইজি বাইক) যোগে সরাসরি যাওয়া যাবে চিলমারির বন্দর।
মোগলবাসা ভাটলার সুইচগেট
বিভিন্ন উৎসবে দর্শনার্থীদের ভীড় বেশি থাকলেও ভ্রমনের জন্য বছরের যে কোন সময়ই যাওয়া যায়। বৃষ্টির সময় নদীতে পানি অনেক বেশি হয়ে বন্যার আশংকা দেখা দিলে গেইটটি বন্ধ করে দিয়ে নদীরে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর দক্ষিনে লম্বা গেইটটিতে সর্বমোট ১৬ টি গেইট রয়েছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
কুড়িগ্রামের মোগলবাসার ৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই সুইচ গেইট, অটোরিক্সা যোগে খুব সহজেই যেতে পারে্ন গেইটটি দেখতে।
সোনাহাট স্থলবন্দর
নদীর তীরবর্তী হওয়ার কারণে ব্রিটিশ আমলে সোনাহাট স্থল বন্দরটি বিখ্যাত বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। এখনো এর গুরুত্ব কমেমি। সোনাহাট স্থল বন্ধর টি ভারতের আসাম এবং পশ্চিম বঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত যা ভারতের সেভেন সিষ্টার বলে খ্যাত অঙ্গ রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে।
এ বন্দর দিয়ে ভারত, আসাম ও নেপাল হতে কয়লা, কাঠ, টিম্বার, পাথর, সিমেন্ট, চায়না ক্লে, বল ক্লে, কোয়ার্টজ, রাসায়নিক সার, কসমেটিক সামগ্রী, পশু খাদ্য, বিভিন্ন ধরণের ফলমূল, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, ডাল, গম, বিভিন্ন ধরণের বীজ, তামাক ডাটা প্রভৃতি মালামাল আমদানী করা হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় ইলিশ মাছ, মেলামাইনের তৈরী বাসনপত্র এবং ঔষধ সহ কতিপয় মালামাল।
কিভাবে যাওয়া যায়:
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা হতে সোনাহাট স্থল বন্দরের দুরত্ব ১২কিলোমিটার। এই দুরত্বের মাঝখানে ১৮৮৭ সালে তৈরি ৪৫০মিটার লম্বা একটি লোহার তৈরি রেলওয়ে ব্রিজ অবস্থিত। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের সোনাহাট সীমান্তে এ স্থল বন্দর অবস্থিত।
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কুড়িগ্রামে এসে অথবা ঢাকা টু ভুরুঙ্গামারীর ডে ও নাইট কোচে ভুরুঙ্গামারীতে নেমে মাত্র ২০ টাকা অটোরিক্সা ভাড়ায় সোনাহাট স্থল বন্দর যেতে পারেন।
বর্ডারহাট (Bordar Hat)
বাংলাদেশের বর্ডারহাট গুলোর মধ্যে রাজিপুর সীমান্তে একটি রয়েছে। এখানে দুই দেশের মানুষ (ভারত বাংলাদেশ)ই কেনাবেচা করতে পারে । পাহাড় এবং নদীর ঠিক মধ্যখানেই এই হাট। সপ্তাহে ২দিন এখানে বাজার বসে। খুব সহজে পাশ সংগ্রহ করে আপনিও যেতে পারেন বর্ডার হাটে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত হতে সহজেই কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়। কুড়িগ্রাম যাওয়ার পর বাস অথবা অটো সিএনজি যোগে রাজীবপুর হয়ে যেতে পারেন বালিয়ামারী সীমান্ত হাট।
ধরলা ব্রিজের পাড়-পিকনিক স্পট
লালমনির হাট থেকে ১১ কিলোমিটার।ধরলা ব্রিজ(Dharla Bridge) মোগলহাট বিডিআর ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত। সাইনবোর্ডে কড়া নির্দেশ জিরো পয়েন্ট অতিক্রম না করার। তবে ওই জিরো পয়েন্ট থেকে আরো একটু সামনে গেলেই ব্রিজটা সবচেয়ে ভালো দেখা যায়।
ধরণা রেল সেতু অনেক পুরোতন এবংপড়েছে ভারতীয় অংশে। এর পাশেই কুড়িগ্রাম জেলা। লোকমুখে শুনাযায় ১০/১২ বছর আগেও এই পথ দিয়ে ভারত থেকে মালামাল পরিবহন হতো। এরপর থেকে ধরলা পাড় ভাংতে শুরু করে। সেতুর গোড়া থেকে সেতুটির প্রায় সমানদৈর্ঘ্যের প্রসস্ততা তৈরী করে সরে এসেছে বাংলাদেশের প্রান্তে। ধরলা নদী ভেঙ্গে আরো একটু এগিয়ে কয়েক হাজার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করেছে। লালমনির হাটে গ্রামের পর গ্রাম পড়ছে ধরলার গ্রাসে। আর প্রমত্তা ধরলা এখন তিস্তার চাইতেও বড়।
নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি হতে পারে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান । নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি (Naodanga Jomidar Bari) কুড়িগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা।
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে আরো প্রায় ৮ কিলোমিটার দুরে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ির টি অবস্থান। নাওডাঙ্গা পরগনার তৎকালীন জমিদার বাহাদুর প্রমদারঞ্জন বক্সী অবিভক্ত ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার আরো আগে বাড়িটি নির্মাণ করেন।
পরবর্তীতে জমিদারীর উত্তরসরী, বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী নাওডাঙ্গা, জমিদার বাড়িটিতে একটি মাইনর স্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এটি বর্তমানে নাওডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে পরিচিত।
এখানে একটি মেলা বসে যা দোল মেলা নামে পরিচিত । বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুণ্য জন্মতিথিতে প্রতি দোলপূর্ণিমায় জমিদার বাড়ির মাঠে এই দোল মেলার আয়োজন শুরু করেছিলেন যা বর্তমানেও চালু আছে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
রাজধানী ঢাকার শ্যামলি অথবা কল্যাণপুর থেকে এস-বি, নাবিল, শ্যামলী, হানিফ এবং কুড়িগ্রাম পরিবহণের বাস সরাসরি কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কুড়িগ্রাম থেকে ফুলবাড়ি উপজেলা সদরে এসে সেখান থেকে সহজেই ৮ কিলোমিটার দূরে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি দেখতে এতে পারবেন।