গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

গাইবান্ধা জেলা উত্তর বঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। এ জেলায় রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান। ভ্রমণ পিপাসু মনের জন্য হতে পারে একটি সুন্দর দিনের খোরাক । চলুন জেনে নেয়া যাক গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে ।


গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো এক নজরে

  • ফুলছড়ির বালাসী ঘাট,
  • সাদুল্লাপুরের নলডাঙ্গা জমিদার বাড়ি,
  • গোবিন্দগঞ্জের প্রাচীন মাস্তা মসজিদ,
  • গাইবান্ধা পৌর পার্ক,
  • ড্রীমল্যান্ড,
  • ঘেগার বাজার মাজার,
  • ড্রীম সিটি পার্ক,
  • হযরত শাহ জামাল (রাঃ) মাজার শরীফ,
  • জামালপুর শাহী মসজিদ,
  • রাজাবিরাট প্রসাদ,
  • পাকড়িয়া বিল

এবার চলুন বিস্তারিত আকারে জেনে নেই গাইবান্ধা জেলার  কিছু কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে ।

গাইবান্ধা  ফুলছড়ির বালাসী ঘাট

১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে রেল ফেরির সার্ভিস চালু করা হয়।

তৎকালীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারাপারের জন্য যোগাযোগ গড়ে তুলতে এ ফেরি সার্ভিসটি চালু করে।

Balashee Feri Ghat

Balashee Feri Ghat

এরপর থেকেই এ ঘাট দিয়ে স্বল্পব্যয়ে অল্প সময়ে যাত্রী পারাপার, কৃষিপণ্য, ডিজেল, সার সরবরাহসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন করা হতো। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়।

বালাসীঘাটের মনরম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ। অনেকে সকালে সপরিবারে বেড়াতে এসে সারাদিন থেকে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরছেন। সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন আনন্দময় স্মৃতি।

Balash Ghat

Balash Ghat

শহর  থেকে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দূরে  ব্রক্ষ্মপুত্র নদের কুলঘেষা প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যমন্ডিত বাঁধ এলাকা ধীরে ধীরে সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

প্রথমে বাস অথবা ট্রেনযোগে গাইবান্ধা জেলা শহরে আসতে হবে।

গাইবান্ধা জেলা বাসস্ট্যান্ড হতে যাওয়ার উপায়ঃ অটোরিক্সা, রিক্সা ও সি.এন.জি.যোগে যাওয়া যায়। অটোরিক্সা ভাড়া-১৫০ টাকা, রিক্সা ভাড়া- ৮০-১০০ টাকা।


সুন্দরগঞ্জ  এর শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৮৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়। আবাসিক- অনাবাসিক মোট ১২৩২ জন ছাত্র/ছাত্রী এ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে।

শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

কিভাবে যাওয়া যায়:

প্রথমে গাইবান্ধা বাসস্ট্যান্ড হতে বাস যোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যেতে হবে। পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা হতে বাস বা অটো রিক্সা যোগে ছাইতান তলা নামক স্থানে যেতে হবে।


গাইবান্ধা পৌরপার্ক

গাইবান্ধা পৌর পার্ক গাইবান্ধা পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধিন একটি উন্মুক্ত স্থান। এটির মাঝে রয়েছে একটি পুকুর ও পুকুরপাড়ে রয়েছে জনসাধারণের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা।  সকাল সন্ধ্যায় অনেক দর্শনার্থী এখানে বিনোদনের আসে।

গাইবান্ধা পৌর পার্ক

গাইবান্ধা পৌর পার্ক

গাইবান্ধা জেলা বাসস্ট্যান্ড হতে রিক্সা, অটো রিক্সা যোগে যাওয়া যায়।


রংপুর সুগার মিলস্ লিমিটেড

গোবিন্দগঞ্জে কৃষিভিত্তিক মিল কারখানা গড়ে না উঠলেও এখানকার মাটি ও জলবায়ু আখঁ চাষের উপযোগী। এ লক্ষ্যে ৩৫ একর জমি নিয়ে ১৯৫৪ সালে কাজ শুরু করে মহিমাগঞ্জ রংপুর সুগার মিলস্ লিমিটেড নামে একটি চিনিকল স্থাপনার কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৫৭ সালে। ১৯৫৭-১৯৫৮ মৌসুম হতেই চিনি উৎপাদন শুরু হয়। চিনিকলটির দৈনিক মাড়াই ক্ষমতা ১৫০০ মেঃ টন।

Rangpur Sugar Mill

Rangpur Sugar Mill

চিনিকলের আওতায় খামারের জমির পরিমান ১৯৮২.২০ একর। মিল এলাকায় আখঁ চাষ উপযোগী জমির পরিমান ৩৯,০০০ একর। আখঁ সাব জোনের সংখ্যা ৮টি এবং ৪২ টি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা হতে অটো বা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়।


বর্ধনকুঠি রাজবাড়ি : গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান

গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে বর্ধনকুঠি একটি ।

সুদূর প্রাচীন কাল থেকে (বর্তমান) গোবিন্দগঞ্জ  উপজেলাধীন বর্ধনকুঠি তৎকালীন রাজা বাদশাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে এখানে রাজা রামপাল এখানে বাসুদেব মন্দির নির্মাণ করেন। তখন রাজা মানসিংহ বাংলার সুবাদার ছিলেন।  ইংরেজ আমলে তা জমিদার বাড়ী হিসেবে খ্যাতি পায় ।

বর্ধনকুঠি

বর্ধনকুঠি

পুরাকালে পুন্ড্রবর্ধন , মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালের বরেন্দ্র এবং আজকের বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস সাদৃত গোবিন্দগঞ্জ বর্তমানে তার প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক কিছু হারাতে বসেছে। নজির হিসেবে বর্ধন কুটি অন্যতম ।

বিধ্বস্ত রাজবাড়ির উন্মুক্ত অংশের বিভিন্ন রকমের সুসজ্জিত ছায়ঘন বৃক্ষ, ফাকে ফাকে শিল্পীর নিপুল হস্তে গড়া এককালের ধোকর মত ক্ষষিষ্ণু দালান কোঠা আর তার অংশ বিশেষে গড়ে উঠা গোবিন্দগঞ্জ কলেজ আজ ও বর্ধন কুঠর স্বৃতিচিহ্ন বক্ষে ধারন করে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।

নাম করনঃ অনেকে ধারণা , গোবিন্দগঞ্জ তানা সদরে অবস্থিত বর্ধন কুঠি প্রাচীন বর্ধন কোট নামে পরিচিত ছিল। কোন সূত্রে ধরে এ স্থানের নাম বর্ধন কোট বা কাল ক্রমে বর্ধন কুঠি হয়েছে তার গুঢ়ত্ব উদঘটন করা বর্তমান প্রজন্মের কাছে অনেকটা দুরুহ হয়ে দাড়িয়েছে।

এককালে এ স্থানে বর্ধন নামে একজন শক্তিধর নরপতি ছিলেন তার নামানুসারে এ স্থানের নাম হয়েছে বর্ধনকোট, যা কালক্রমে বর্ধন কুঠিতে রুপ নিয়েছে। নাম করণর ক্ষেত্রে অনেকে এ কথাও মনে করেন, বর্তমানে যে, স্থানটি বর্ধনকুঠি নামে পরিচিত সেই স্থানটি শক্তিধর বর্ধন বংশীয় কোন এক উত্তর সুরী এসে (পরবর্তীতে) স্থায়ী বসতি গড়েন, তখন তাদের বংশীয় নামের সূত্র ধরে বর্ধনকোট বা বর্ধন কুঠি নামে সৃ্ষ্টি হয়।

অবস্থানঃ প্রাচীন গ্রন্থাদিতে ও বর্ধন কোটের নাম পাওয়া যায়। তবে, মীন হাজ ই সিরাজ বর্ণিত এই মর্দান কোট বা বর্ধন কোট এর অবস্থান নির্ণয়ে ঐতিবাহিক মহলে এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মীনহাজ ই সিরাজ তার বিখ্যাত গ্রন্থ তবকাত ই নাসিরীতে এমন কোন বর্ণনা দেননি যা থেকে সহজেই অনুমান করা সম্ভব যে, আজকের বর্ধনকুঠিই ইতিহাস প্রসিদ্ধ বর্ধন কুঠি।

বরং তিনি উল্লেখ করেছেন এ নগরের সম্মুখ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত । অসাধারন বিশাল দারুন এ নদীকে বাক মতি নামে আখ্যায়িত করা হয়।

কিভাবে যাওয়া যায়:

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা হতে অটো বা সিএনজি যোগে যাওয়া যায়।


মীরের বাগানের ঐতিহাসিক শাহসুলতান গাজীর মসজিদ

বর্তমান গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত এ প্রাচীনতম মসজিদ। মসজিদ গাত্রের শিলা লিপি থেকে পাওয়া তথ্য মতে ১৩০৮ ইং সালে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী নামক এক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব  এ মসজিদ আবিষ্কার করে সংস্কার করেন।  পরবর্তীতে শাহ্ সুলতান নামক এক ধর্মযোদ্ধার নাম এর সাথে জড়িয়ে যায় ।

Shah Sultan Gazi Mosque

Shah Sultan Gazi Mosque

তাঁর নামেই এ মসজিদ পরিচিতি পায়। এছাড়াও এই মসজিদের পাশেই শাহ্ সুলতান গাজীর মাজার অবস্থিত।  বর্তমানে প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে মেলা বসে।

প্রাচীন মাস্তা মসজিদ : গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদর হতে প্রায় ০৩ কি.মি. দক্ষিণে এবং কামারদহ ইউনিয়নের ফাঁসিতলা বাজার হতে ০১ কি.মি. উত্তরে মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে মাস্তা মসজিদ অবস্থিত । যে কোন যানবাহন ব্যবহার করে মাস্তা মসজিদে যাওয়া যায় ।

প্রাচীন মাস্তা মসজিদ : গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান

প্রাচীন মাস্তা মসজিদ : গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পুরাতন মসজিদ গুলোর মধ্যে  প্রাচীন মাস্তা মসজিদ স্থাপত্যের  অপর একটি নিদর্শন । কামারদহ ইউনিয়নের  মাস্তা গ্রামের প্রাচীন লাল মসজিদটিই ‘মাস্তা  মসজিদ’ নামে পরিচিত । মসজিদ এলাকার জনশ্রুতি মতে এককালে এ এলাকায় বাদশা ফকির নামে একজন  প্রভাবশালী  ও ধর্মপরায়ন ব্যক্তির বাস ছিল ।

তিনি এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁর ও তাঁর উত্তারসুরীর  আসল পরিচয় আজও মেলেনি । প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি  কোন সময়  নির্মিত হয়েছে তা কোন সূত্র থেকেই আজও জানা যায়নি । তবে মসজিদের নির্মাণ কৌশল ও মোঘল আমলের মসজিদ স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যের সূত্র  ধরে অনুমান করা যায় মাস্তা মসজিদটি  মোঘল আমলের  কোন  এক সময় নির্মিত হয়েছিল ।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট এবং প্রস্ত ১৬ ফুট । চার কোণে চারটি স্তম্ভ রয়েছে । একই আকারের তিনটি গম্বুজ আছে । দরজা তিনটি । কোন জানালা নেই । ভিতরে দুই সারিতে নামাজ আদায় হয়ে থাকে ।


এসকেএস ইন. রিসোর্ট

নদী বিধৌত গাইবান্ধা জেলায় সবুজের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম 4 star রিসোর্ট SKS Inn. প্রায় ৬০ বিঘা জায়গা জুড়ে অবস্থিত এ রিসোর্টে ডে-লং, ফ্যামিলি গেট টুগেদার, কর্পোরেট ইভেন্ট, কনফারেন্স, বিয়েসহ সকল প্রকার ইভেন্ট আয়োজন করতে পারবেন। এসকেএস ইন্-এ রয়েছে ডিলাক্স রুম, টুইন ও ফ্যামিলি রুম, ওয়াটার ভিলা, গার্ডেন ভিউ ভিলা, ফ্যামিলি ভিলা, লেক ফ্রন্ট ভিলা।

sks inn resort

sks inn resort

যেখানে স্বাচ্ছন্দে রাত্রী যাপন করা যায়। এখানে আপনি পাচ্ছেন সুবিশাল সুইমিংপুল, বোটিং, সাইকেলিং, ফিশিং, জিমনেশিয়াম, স্যুনা, স্টিম বাথ, ঝুুুলন্ত ব্রিজ, চিল্ড্রেন জোন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাইভ বাউল গান, মিনি চিড়িয়াখানা, ২৪/৭ রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, ইনডোর গেমস, লন্ড্রি সুবিধাসহ আরো অনেক কিছু।

ফ্যামিলি এবং কর্পোরেট ইভেন্ট ছাড়াও এসকেএস ইন্ -কে  কেন্দ্র করে গাইবান্ধাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহের ঐতিহাসিক/দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের জন্য ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন যেকোনো দিন, যেকোনো সময়।

গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার

গাইবান্ধা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে তারকাটায় ঘেরা একটি বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। এক পাশে বড় একটি ফটক। কৌতূহলী এ স্থান-স্থাপত্যের নাম ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত এই ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারটি। এটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়।

Friendship Center gaibandha

Friendship Center gaibandha

সংস্থাটি চরের মানুষের জন্য কাজ করে। সরেজমিন পরিদর্শনে ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার স্থাপত্য শিল্পে এক অনবদ্য সৃষ্টি। যা শুধু গাইবান্ধা তথা আমাদের দেশকে নয় অবাক করেছে বিশ্বকে। যার ফলশ্রুতিতে মিলেছে একাধিক বিদেশি অ্যাওয়ার্ড। ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারটি সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত। অর্থাৎ ভবনের ছাদ ভূমি সমতলে। ছাদে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ঘাস।

ওপর দিক থেকে দেখলে মহাস্থানগড়ের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ছবি ফুটে ওঠে অনেকটা। যা দেখে স্বাভাবিকভাবেই যে কেউ অভিভূত হবেন। এই ভবনে চলে দাপ্তরিক নানা কর্মকাণ্ড। রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। ভেতরের সবকিছু দৃষ্টিনন্দন।

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর মদনেরপাড়া গ্রামে প্রায় আটবিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেন্টারের ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। ‘আরবান কন্সট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারটি নির্মাণ করে। এতে ব্যয় হয় আনুমানিক আট কোটি টাকা। সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর।

এখানে রয়েছে দুইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর মধ্যে একটি শীতাতপ কেন্দ্র। কেন্দ্র দুইটিতে একসঙ্গে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। আবাসিক কক্ষ রয়েছে ২৪টি। আবাসিক কক্ষগুলোর মধ্যে শীতাতপ পাঁচটি। সবগুলো কক্ষে ৫০ জন লোক থাকতে পারবে। সেন্টারে রয়েছে উন্নত খাবার ব্যবস্থা। একসঙ্গে ৭০ জন লোক খেতে পারে। পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে পাঁচটি নর্দমা। যারা আবাসিকে থাকবেন, তাদের জন্য রয়েছে অভ্যন্তরীণ খেলাধুলার ব্যবস্থা ও বই পড়ার লাইব্রেরি। এখানে প্রতিদিন কেরাম, দাবা ও ব্যাডমিন্টন খেলা চলে। লাইব্রেরিতে আছে পাঁচ শতাধিক বই।

সেন্টারে রয়েছে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা এবং উন্নতমানের মিউজিক সিস্টেমের সুযোগ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। বিদ্যুৎ না থাকলে নিজস্ব জেনারেটরের ব্যবস্থাও রয়েছে। সুন্দর স্থাপত্য নির্মাণের জন্য ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারটি ২০১২ সালে ‘এআরপ্লাসডি অ্যাওয়ার্ড’ পায়। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক্স রিভিউ এই পুরস্কার দেয়। এ ছাড়া চলতি বছর ‘আগাখান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পেয়েছেন ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারের স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) এই পুরস্কার দেয়।

ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ২৫ দিনই সেন্টারের নিজস্ব কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলে। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করে হাজারো দর্শনার্থী।

জামালপুরের শাহী মসজিদ : গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান

ইতিহাস-ঐতিহ্যে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে জামালপুরের শাহী মসজিদ(Jamalpur Shahi Masjid)। নির্মাণশৈলীর দিক থেকে মুসলিম অন্যান্য স্থাপত্যের দৃষ্টিতে খুব উচ্চতর পর্যায়ের না হলেও, ঐ স্থানের মুসলিম সম্প্রদায়কে এখনো আলোড়িত এবং উদ্বেলিত করে প্রাচীন এই স্থাপনাটি। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সিনিয়র আলীম মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে মসজিদটি অবস্থিত।

Jamalpur Shahi Masjid

Jamalpur Shahi Masjid

স্মৃতি বিজরিত এই প্রত্নতত্বটি ঠিক কত খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট তারিখ বা ইতিহাস কারো জানা না থাকলেও জনশ্রুতি আছে আজ থেকে ৬’শ বছর আগে অর্থাৎ ৯’শ ২৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরাক থেকে যে ৩’শ ৬০ জন অলি কামেল ব্যক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য যান, তার মধ্যে হযরত শাহ্ জামাল এক জন।

আর এই প্রাচীন ইমারতটি হযরত শাহ্ জামালের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে শাহী মসজিদ। এছাড়া তার নামানুসারে ইউনিয়নের নাম হয়েছে জামালপুর। মসজিদের পাশেই রয়েছে হযরত শাহ্ জামালের মাজার শরীফ। মসজিদের মূল অবকাঠামো এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তবে মসজিদটি কয়েক ফুট মাটির নিচে দেবে গেছে বলে এলাকার অনেকই জানান।

প্রত্নতাত্নিক নিদর্শণটির নিচের দেয়ালে আছে ইটের ৭২ ইঞ্চি ও উপরের দেয়ালে আছে ৫৬ ইঞ্চি পুরু দেয়াল। তাই এটি বাহির থেকে অনেক বড় মনে হলেও মসজিদের ভিতরে শুধু মাত্র ২ কাতারের নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এলাকার লোকজনের উদ্যোগে মসজিদের মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মসজিদের সামনে ৩ দফা বারান্দা ও ছাদ নির্মাণ করে মসজিদের মেঝে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এই মসজিদ ও হযরত শাহ্ জামালের মাজার শরীফকে কেন্দ্র করে এই গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ, পোষ্ট অফিস, মাধ্যমিক বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, ফাজিল মাদ্রাসা, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা অফিস। মসজিদের বিভিন্ন মানতের টাকা এবং জনগণের অনুদানের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে এখানকার এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। গড়ে উঠেছে বাজার। বাজারের দোকানগুলোর মাধ্যমে শতাধিক পরিবার উপকৃত হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী গ্রামের শতবর্ষী ব্যক্তি গোলাম হোসেন জানান, মসজিদের মূল অবকাঠামোতে নামাজ পড়লে গা ছমছম করে উঠে। মহুর্তের মধ্যে মনের মধ্যে জেগে উঠে আল্লাহ ভীতি। প্রতি শুক্রবারেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ মানতের পুরণের জন্য চাল, হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু, নিয়ে এসে পোলাও রান্না করে বিতরণ করেন।যে কেউ যেকোনও নিয়তেই মানত করলে আলাহর রহমতে তা পূরণ হয় বলে জানান তিনি।

মসজিদ সংলগ্ন বাসিন্দা ও এনজিও সদস্য এম এ কাইয়ুম মন্ডল জানান, আমার ১০সিঁড়ি পূর্বের বংশধর সৈয়দ ভোম আলী ভারতের শিলিগুড়ি থেকে, সুলতান মাহমুদের আমলে হযরত খাঁজা মঈন উদ্দিন চিচতিয়ার নির্দিশে, ইসলাম প্রচারের জন্য এই এলাকায় এসে হযরত শাহ জামালের সাথে মিলিত হন। সম্ভাবত তাঁরাই এই মসজিদ নির্মাণ করেন এবং মসজিদের পাশে একটি পুকুর খনন করেন।

তিনি জানান, ‘কথিত আছে-এই পুকুরে এক সময় সোনার চালন ভাসতো। পুকুর খননের কোন ইতিহাস কারো জানা নেই। লোকমুখে শুনেছি-এই এলাকায় বিরাট জঙ্গল ছিল। জঙ্গলে বাঘ-ভালল্লুকও বাস করত। মসজিদের দুই পার্শ্বে পাহাড়াদারের মত সার্বক্ষণিক ২টি বাঘ থাকতো। শুনেছি ফসল ফলানোর জন্য এই জঙ্গল পরিস্কার করার সময় এই মসজিদ ও পুকুর আবিস্কৃত হয়। তখন থেকেই এই মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায় করতো’।

জানা যায়, মোগল আমলেই ১৯’শ শতাব্দির ১ম বা ২য় দশকে এই মসজিদ আবিস্কার হয়।মোগল আমল থেকেই হযরত শাহ্ জামালের নামের শেষে চৌধুরী উপাধি দেয়া হয়। জিয়াউর রহমানের সময় ড. আর.এ গণি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময় এই মসজিদ সংরক্ষণের জন্য প্রতিনিধি প্রেরণ করলেও সরকার বদলের পর থেকে অদ্যাবধি মসজিদ ও মাজার শরীফ ঐ অবস্থায় আছে। স্থানীয় মানুষের প্রচেষ্টায় বর্তমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের সিনিয়র আলীম মাদরাসা সংলগ্ন স্থানে মসজিদটি অবস্থিত।


ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক – গাইবান্ধা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণমারী গ্রামে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদুন্নবী চাঁদ ১৯৯৫ সালে ১৭ একর জমিতে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বিনোদন কেন্দ্র ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক (Dreamland Educational Park)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ড্রিমল্যান্ডই গাইবান্ধার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। এতে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, দেশি-বিদেশি বাহারি গাছগাছালি, ফুল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনদের ভাস্কর্য আর শান বাঁধানো পুকুর।

Dreamland Educational Park

Dreamland Educational Park

ড্রিমল্যান্ডের সুদৃশ্য প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বেশ কিছু সরু রাস্তা। রাস্তার দুই ধার জুড়ে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা রং ও গন্ধের অসংখ্য ফুল গাছ, রয়েছে অর্কিড আর ক্যাকটাসও। দর্শনার্থীদের বসার জন্য কিছুদূর পরপর রয়েছে বেঞ্চ আর শেড। ড্রিমল্যান্ডে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে এসব শেডে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া বৃষ্টি বা রোদে শেডের নিচে বসে উপভোগ করা যায় ড্রিমল্যান্ডের অপরূপ সৌন্দর্য।

ড্রিমল্যান্ডের মাঝখানে রয়েছে শান বাঁধানো সুন্দর একটি পুকুর, এর চারপাশ ঘিরে বাহারি গাছের সমাহার। সব মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ, নানা রংয়ের ফুল, গাছপালা, পশুপাখির ভাস্কর্য সহজেই যে কারো মন ভরিয়ে দেয়।

গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমানসহ বরেণ্য ব্যক্তিদের সুদৃশ্য ভাস্কর্য। এখানে ২৫৫ জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও গুণিজনের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ইতিহাসে ঘৃণিত ব্যক্তি ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, মোস্তাক আহমেদের ভাস্কর্যও। এ যেন বিনোদনের ফাঁকে ফাঁকে ইতিহাস শেখা।

এখানকার ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করেছেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রিমল্যান্ড নামে এই বিনোদন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সুদৃশ্য একটি মানচিত্র, আরও রয়েছে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র।

এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন জীবজন্তুর ভাস্কর্য। শিশুরা এসব জীবজন্তুর পিঠে চড়ে খেলা করতে পারে। এছাড়া তাদের জন্য একটি শেডে বলসহ বিভিন্ন খেলনা রয়েছে।

১০ টাকায় টিকেট কেটে ড্রিমল্যান্ডে প্রবেশ করতে হয়। ড্রিমল্যান্ডে খাওয়ার জন্য ছোট ছোট কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান থাকলেও এখানে রাত থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে পলাশবাড়ীতে রাত যাপন করার জন্য রয়েছে শিল্পি আবাসিক হোটেল। পলাশবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় করে যেতে হয় এখানে। এ হোটেলে থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকার মহাখালী, গাবতলী কিংবা কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে বা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে গাইবান্ধায় আসা সম্ভব। ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় এসি বাসের ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা এবং নন এসি বাসের ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা। আর ট্রেনের ভাড়া ২৫০শ’ থেকে ৩৫০শ’ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে পলাশবাড়ী যেতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে পলাশবাড়ীর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা টেম্পুতে করে গাইবান্ধা থেকে পলাশবাড়ী যাতায়াত করা যায়।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!