কিভাবে কিডনি ভালো থাকবে জেনে নিন!
কিডনি, মানব শরীরের ছাকনি যা কিনা ছেঁকে দূষিত ও অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য মানব শরীর থেকে ইউরিন আকারে বের করে দেয় । আর কি খেলে কিডনি ভালো থাকবে কিংবা কিভাবে কিডনি ভালো রাখা যায় সেটা জানাও দরকার আমাদের ।
আজকাল হাসপাতাল গুলোতে গেলেই যেন দেখা যায় কিডনি (Kidney) সমস্যায় ভোগা মানুষের ঢল। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে ডাক্তাররা এখন পেটের ডানে বামে ব্যাথা দেখলেই প্রথমে কিডনির কোন সমস্যা আছে কিনা সেটা চেক করেন। এখন আমরা সবাই জানি যে কিডনির চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এটি আবার যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপারও বটে। তাই কিডনি ভালো রাখার বিষয়ে সচেতন হলেই আমরা ভাল থাকতে পারি অনেকাংশই।
কিভাবে কিডনি ভালো থাকবে ?
কিভাবে কিডনি ভালো থাকবে সে বিষয়ে অনেকেই আমরা জানি না। কিন্তু খুব সাধারণভাবে এবং সহজেই যদি আমরা কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে কিডনি ভালো রাখতে পারি। তাহলে আসুন একটু জেনে নেবার চেষ্টা করি কিভাবে কিডনি ভালো থাকবে আমাদের।
কিডনি ভালো রাখতে অল্প কিছু নিয়ম ও খাদ্যাভ্যাস পালন করলেই হবে।
কিডনিতে কী ধরণের সমস্যা হতে পারে?
কিডনিতে খুব সাধারণ একটি রোগ হলো কিডনিতে পাথর। এই সমস্যার কথা খুব কম মানুষই শোনেনি।
তবে এই সমস্যা ছাড়াও কিডনিতে ইনফেকশন, টিউমার, গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।
সমস্যা যেমনই হোক, সকল সমস্যা দূর করতে অল্প কিছু নিয়ম মেনে চললে আর কোন ভয় থাকে না। তবে কিডনির যে কোন ধরনের সমস্যা অনুভব হলে দেরি না করে সরাসরি ডাক্তার এর পরামর্শ নিন ।
কিডনি ভালো রাখতে পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি
পানি এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের শরীরের বেশিরভাগ রোগ আমাদের থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
কিডনিকে সচল রাখতে সাহায্য করে পানি। সেই সাথে কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপে সহায়তা করে পানি।
বিজ্ঞানীরা এবং ডাক্তার উভয়েই বলেন যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে কমপক্ষে দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এতে তার কিডনি ভালো ও সচল থাকবে।
কোমল পানীয়, কফি, চা ইত্যাদির ব্যাপারে হতে হবে সতর্ক
প্রায়শই আমরা কোমল পানীয়, কফি, চাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার গ্রহণ করি।
এ সকল খাবার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে এটি পানিস্বল্পতাও তৈরি করে শরীরে।
শরীরে পানিস্বল্পতা কিন্তু কিডনিতে পাথর হবার অন্যতম একটি কারণ।
সুতরাং এসকল খাবার গ্রহণ করার ব্যাপারে খুব সতর্ক হোন, যথাসম্ভব বিরত থাকুন।
ধূমপান আর করবেন কি!
কেবল আমাদের দেশেই নয়, বরং সারাবিশ্বেই ধূমপান একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
ধূমপানের কারণে একদিকে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে কেবল ফুসফুস বা হৃদরোগের কারণই নয়, ধূমপান হতে পারে কিডনিতে ক্ষতি হবার মারাত্মক কারণ।
তাই এই বদঅভ্যাস থেকে যতদ্রুত সম্ভব ফিরে আসুন।
পেইন কিলার ব্যবহার করতে গেলে হতে হবে সাবধান
আজকাল প্রচুর ফার্মেসি গড়ে উঠেছে।
এ সকল ফার্মেসিতে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে সাধারণ মানুষ সামান্য ব্যাথা হলেই ছুটে যান।
আর প্রচুর পরিমাণ পেইন কিলার গ্রহণ করেন তাদের পরামর্শে।
এরূপ সামান্য ব্যথাতে পেইন কিলার খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
কারণ পেইন কিলার কিডনির কোষের অতিরিক্ত ক্ষতি করে ফেলে।
ব্যথার পরিমাণ একান্তই অসহ্য হলেই গ্রহণ করুন নচেৎ নয়।
অতিরিক্ত লবণ খাবেন না, বন্ধ করুন
কিডনির জন্য অন্যতম ক্ষতিকর হলো অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ গ্রহণ।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চামচ লবণের চাহিদা থাকে বলে গবেষণা জানায়।
সুতরাং অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করুন, কিডনি কে সুস্থ রাখুন।
অতিরিক্ত লবণ খেলে এর সোডিয়াম কিডনি জমে থাকে, কিডনির ক্ষতি করে।
প্রস্রাবের বেগ হলে আটকে রাখবেন না
এই অভ্যাস কমবেশি আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের সকলেরই আছে।
কিন্তু অনেকক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। এতে কিডনিতে চাপ পড়ে, হঠাৎ করেই হতে পারে ব্যাথা।
চিকিৎসকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এধরণের অভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে।
চর্বি জাতীয় খাবার কম করে খান
আমিষের অভাব পূরণে মাংস কম খান। তার বদলে মাছ এবং শাক-সবজি বেশি করে খান।
চর্বি জাতীয় খাবার কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকারক বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তার এটি হজম করতেও প্রচুস সময় লাগে ।
তাছাড়া মাংসের ফাইবার কিডনির ওপর চাপ পড়ে যায়।
সুতরাং মাংস খান খুব মেপে মেপে।
নিয়ন্ত্রনে রাখুন রক্তচাপ
রক্তচাপ বেশি থাকলে কিডনিতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই রক্তচাপ সবসময় স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে রাখবে সুস্থ ও সবল।
ভিটামিন ‘সি’ খেতে হবে স্বাভাবিক ও নিয়ম করে
ভিটামিন সি খুব ভালো।
তবে খুব ভালো বেশি পরিমাণে হলে আর ভালো থাকে না।
গবেষণা বলে, মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলি ভিটামিন সি-্ই যথেষ্ট।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন সি কিডনিতে পাথর হবার ঝুকি বাড়ায়।
উপরোক্ত বিষয় সমূহ সচেতন ভাবে মেনে চললে কিডনিজনিত সমস্যা থেকে থাকা যাবে মুক্ত ও নিরাপদ। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন।
নোট:
আমরা শুধু ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি, এগুলোই আল্টিমেট সমাধান নয় । ভালো হয় কোন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ -র পরামর্শ নিলে এবং আবারো বলছি, কিডনি সংক্রান্ত যেকোন জটিলতা অনুভব হলে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন ।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সেই প্রত্যাশা রইলো 🙂 …