কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বর্তমান সময়ে ব্যাংক এবং ব্যাংকিং লেনদেনের প্রয়োজন পরে প্রায় সবক্ষেত্রেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অর্থের লেনদেন করতে হয় প্রায় প্রতিটি সময়, প্রতিটি বিষয়ে। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা বর্তমান সময়ের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন থেকে যায় কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন তা নিয়ে। একটা সময় ছিল যখন একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা খুবই ঝামেলাপূর্ণ ছিল। সব কিছুই ছিল ম্যানুয়া্ল বিষয়। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে তা হয়েছে আধুনিক এবং ঝামেলাবিহীন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন বিশেষ করে প্রথমেই কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
একটি ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন যে কি ধরনের কাগজ পত্র দিয়ে হিসাব খুলতে হয়। তাই কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন এবং কি কি কাগজপত্র লাগবে তা জানা খুবই জরুরি।
একটি ব্যাংক হিসাব ওপেন করতে কি কি প্রয়োজন হয়
যেকোন ব্যাংকে ব্যাংক হিসাব ওপেন করতে হলে কিছু জরুরি কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে।
ব্যাংক কখনো লিখিত কোন দলিল ব্যতীত কোন কাজ করেনা।
তবে বিভিন্ন কাগজপত্র ব্যাংকভেদে বিভিন্ন হতে পারে।
সাধারণত যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় সেগুলো হল-
১। ব্যাংক প্রদত্ত অ্যাকাউন্ট ফরম বা হিসাব খোলার আবেদন পত্র।
২। স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড যাতে গ্রাহকের পরিষ্কার সিগনেচার থাকবে।
৩। হিসাবধারীর সাম্প্রতিক সময়ের দুই কপি রঙ্গিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
ছবির পিছনে গ্রাহকের স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে।
সেই সাথে একজন পরিচয়দানকারীর স্বাক্ষরও থাকতে হবে।
৪। হিসাবের নমিনির সাম্প্রতিক সময়ে তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি।
এই ছবির পিছনেও হিসাবধারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে যা নমিনীকে সত্যায়িত করে।
৫।হিসাবধারী এবং নমিনীর জাতীয় পরিচয়পত্র
এক্ষেত্রে উভয়ের ছবিযুক্ত যেকোন পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদির যেকোনটির অনুলিপি ব্যাংকে প্রদান করতে হবে।
৬। একজন গ্রাহক চাইলে তার জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করেও ব্যাংক হিসাব ওপেন করতে পারে।
তবে সেক্ষেত্রে আরেকটি বাড়তি পরিচিতিপত্র প্রদান করতে হবে।
সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হিসাব পরিচালনাকারীর ছবিযুক্ত অন্য যেকোনো গ্রহণযোগ্য পরিচিতিপত্র হতে পারে।
৭। হিসাবধারীর ঠিকানা প্রমাণের জন্য তার যেকোন ইউটিলিটি বিলেরকপি লাগবে।
ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন/টিন সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রদান করতে হবে।
৮। চলতি হিসাব খোলার জন্য বা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি হিসাব খোলার সময় হালনাগাদ করা ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।
৯। প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের নামে সিল প্রয়োজন হবে।
পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ
১০। পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পার্টনারশিপ চুক্তি জমা দিতে হবে।
সেই সাথে সিগনেচার কার্ডে অপারেটর ইনস্ট্রাকশন ঠিক ভাবে দিতে হবে।
এবং প্রত্যেক পার্টনারের আলাদা আলাদা ভাবে পরিচিতি লাগবে।
প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১১। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে
ক. কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন)
খ. আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন ( )
গ. মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন ( )
ঘ. রেজুলিউশন যাতে হিসাব খোলার এবং পরিচালনার বিষয়ে পূর্ণ বিবরণ থাকবে।
ঙ. বেনিফিসিয়াল ওউনার হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সকল বোর্ড মেম্বার ও ডাইরেক্টরদের ব্যক্তিগত তথ্য।
১২। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মত সকল কাগজপত্র লাগবে।
তার সাথে বাড়তি করে আরেকটি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়।
সেটি হল সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট।
ক্লাব বা এসোসিয়েশন এর বেলায় কি ধরণের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে
১৩। এসোসিয়েশন/ক্লাব/সোসাইটি/চ্যারিটি ইত্যাদির বেলায়
ক. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদন পত্র বা অনুমোদিত সংবিধান।
খ. রেজুলিউশন যাতে হিসাব পরিচালনাকারীদের পরিচয়।
গ. সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন
ঘ. এক্সিকিউটিভ কমিটির মেম্বারদের তালিকা যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত।
ট্রাস্টের ক্ষেত্রে কোন ধরণের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে
১৪। ট্রাস্টের ক্ষেত্রে ট্রাস্টের চুক্তির সার্টিফাইড কপি লাগবে। সাথে
ক. ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পূর্ণ তালিকা।
খ. রেজুলিউশন যাতে হিসাব পরিচালনাকারীদের পরিচয়।
সাধারণভাবে এসকল কাগজপত্রের মাধ্যমেই একটি একাউন্ট করা যায় যেকোন ব্যাংকেই।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের আদেশ প্রদান করে।
সেক্ষেত্রে ব্যাংকভেদে কাগজপত্রের তারতম্য হতে পারে।