মোবাইল ফোন কি? কিভাবে কাজ করে?
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, মাত্র গত শতাব্দীর শুরুর দিকেও যদি কেউ এমন কথা বলতো যে সে সরাসরি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে থাকা কারো সাথে কথা বলেছে তাহলে মানুষ নিশ্চিত তাকে পাগল ঠাওরে বসতো।
অথচ সেই জিনিসটিই এখন এতোটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে, এখন এমনটা না ঘটলেই বরঞ্চ অস্বাভাবিক মনে হবে। আর যার কল্যাণে এমনটা সম্ভব হয়েছে সেটা হলো বিজ্ঞানের উদ্ভাবন ‘মোবাইল ফোন’।
মোবাইল (Mobile) অর্থ চলমান, তাই যে ফোন নিয়ে চলাচল করা যায়, সে ফোন কে মোবাইল ফোন বলে । আগে শুধ ল্যান্ড ফোন (তার যুক্ত ফোন) ছিলো যা নিয়ে চলাচল করা যেতোনা ।
মোবাইল ফোন আসলে কি?
মোবাইল ফোনের আরেক নাম সেলফোন। মোবাইল ফোন বা সেলফোন যাই বলি না কেনো, সহজভাবে বললে বলতে হয়, মোবাইল ফোন হলো হাতে বহনযোগ্য এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে কেউ কল দিতে বা রিসিভ করতে পারে। যদিও প্রথম দিকের মোবাইল ফোনের কাজ শুধু এটাই ছিলো কিন্তু বর্তমানে এর কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখনকার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া বা রিসিভ করার পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেম খেলা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, নেভিগেশনসহ আরো নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের বহুবিধ সুযোগ সুবিধাযুক্ত মোবাইল ফোনকে ‘স্মার্টফোন’ বলা হয়।
কিভাবে এলো মোবাইল ফোন?
১৯৭২-৭৩ সালে মার্টিন কুপার নামের একজন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে প্রথম আবিষ্কৃত হয় সেলুলার ফোন। তিনিই প্রথম সেলুলার ফোন দিয়ে কল করেছিলেন। এসব কারনে তাকে ‘ফাদার অফ সেলুলার ফোন’ বলা হয়।
আগেই বলা হয়েছে প্রথম দিকের মোবাইল শুধু কল আদান প্রদানের কাজের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল। কিন্তু প্রথমদিকের মোবাইলগুলো এতোটাই ভারী ছিলো যে, এগুলোকে পকেটে নিয়ে বেড়ানো প্রায় অসম্ভব ছিলো। এগুলো আরএফআইডি বা রেডি ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ওয়্যারলেস পদ্ধতিতে কাজ করতো। যার মাধ্যমে শুধু ভয়েস আদান প্রদান করা সম্ভব ছিলো।
এরপর আসে গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমুনিকেশন্স বা জিএসএম নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে ভয়েস কলের পাশাপাশি টেক্সট মেসেজও পাঠানো সম্ভব হয়। একদিকে মোবাইল ফোন যতই আধুনিক হচ্ছিলো ততই কমে আসছিলো তার আকার। এ পর্যায়ে এগুলোকে খুব সহজেই পকেটে বহন করা সম্ভব ছিলো। তার সাথে যুক্ত হয়ে যায় আরেকটি নতুন ফিচার এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং সার্ভিস।
বিভিন্ন ধরনের মিডিয়াও মেসেজের মাধ্যমে এখন আদান প্রদান সম্ভব হয়েছিল। যেসকল মোবাইলে এই ফিচারটি ছিলো তাদের বেশিরভাগেরই আবার ক্যামেরাও ছিলো। যার মাধ্যমে তারা ছবি তুলে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে খুব সহজেই শেয়ার করতে পারতো।
এরপর মোবাইল ফোনে যুক্ত হয় এক যুগান্তকারী জিনিস ‘ইন্টারনেট’। প্রাথমিক পর্যায়ে যদিও এটি খুব সীমিত পর্যায়ে চলতো কিন্তু পরবর্তীতে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া মোবাইল ফোন কল্পনা করা যায় না। এটি ইন্টারনেটের চেহারাই বদলে দেয়। ই-কমার্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল বিজনেসে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে মোবাইল ফোন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে যোগ হতে থাকে আরো নিত্যনতুন সব ফিচার। আরো শক্তিশালী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নিয়ে বর্তমানে মোবাইল ফোন অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটারের মতো হয়ে গেছে।
কিভাবে কাজ করে মোবাইল নেটওয়ার্ক?
একটা মোবাইল ফোন সচরাচর সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই কাজ করে। সেলুলার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে মূলত মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে কল আদান প্রদান করা হয়। যখন একটা কল করা হয় সেই কলটি কলদাতার সবচেয়ে কাছের মোবাইল টাওয়ারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। সেই টাওয়ার থেকে যাকে কল করা হয়েছে সেই লোকেশনের সবচেয়ে কাছের টাওয়ারটিকে খুঁজে নেয়।
এরপর সেই টাওয়ার থেকে যাকে কল করা হয়েছে তার সাথে সংযোগ স্থাপিত হয়। যাকে কল করা হয়েছে তিনি যদি টাওয়ারের আওতার বাহিরে থাকেন তাহলে তার সাথে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে না। এভাবে উক্ত সেলুলার নেটওয়ার্কের আওতায় যত শহর, গ্রাম বা অঞ্চল রয়েছে সেসকল স্থানে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
মোবাইল ফোনের যেমন আধুনিকায়ন হয়েছে সেরকম আধুনিক হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। স্মার্টফোনে এসেছে ৩জি, ৪জি, ৫জি নেটওয়ার্ক। এর ফলে ভয়েস ও ইন্টারনেট সার্ভিস উভয়েরই ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে।
কোন কোন কাজে লাগে মোবাইল ফোন?
মোবাইলের উদ্ভাবন এবং তৎপরবর্তী উন্নয়নের ফলে মোবাইল ফোন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে মোবাইল ছাড়া কোনো ব্যক্তির দিন পার করা একটা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন কোনো কাজ নেই যেখানে মোবাইলের আওতার বাহিরে রয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, আবহাওয়া, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয় না। সাম্প্রতিক সময়ের করোনা মহামারিতে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে মোবাইল ফোন।
বিজ্ঞানের অবদান শুরু থেকেই মানব সভ্যতার পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের মতো এতো ব্যাপকভাবে মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়নি আর অন্য কোন প্রযুক্তি। ভবিষ্যতে না জানি আরোও কত কি সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমাদের সামনে আসবে মোবাইল ফোন সেটা কে জানে?