দিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ কি কি?

প্রশ্ন উত্তরCategory: টুর ট্রাভেলসদিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ কি কি?
Abdullah Al Faroque Staff asked 1 year ago


1 Answers
Abdullah Al Faroque Staff answered 1 year ago

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন ও  সমৃদ্ধ। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত দিনাজপুর জেলা চাল, লিচু ও আম উৎপাদনের জন্য খ্যাত। এই জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহ্যমন্ডিত স্থাপনাগুলো হলো-


  • কান্ডজির মন্দির;
  • রামসাগর দিঘী;
  • রাজবাড়ী;
  • স্বপ্নপুরী স্পট ইত্যাদি।

দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
দ্বীপশিখা স্কুলঃ দিনাজপুর জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার রুদ্রপুরে অবস্থিত দ্বীপশিখা স্কুল মাটির তৈরি একটি ভিন্নধর্মী বিদ্যালয়। স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরা হলে এই বিদ্যালয়। স্থানীয় কাঁচামাল, বাঁশ ও কাদামাটি তৈরি এই বিদ্যালয়টি মেটি স্কুল নামে বেশি পরিচিত। সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব ৮ হাজার বর্গফুটের দ্বিতল বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রতিটি তলায় তিনটি করে কক্ষ এবং দোতলায় যাবার জন্য বাঁশ দিয়ে উন্মুক্ত সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। নিচের অংশের মোটা মাটির দেয়ালের প্লাষ্টার হিসেবে মাটি, বালু ও খড় মেশানো কাদা দেয়া হয়েছে।

দিনাজপুর রাজবাড়ীঃ দিনাজপুর শহরের অতি সন্নিকটে অবস্থিত দিনাজপুর রাজবাড়ী এ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে পরিচয় বহন করে আসছে। ১৯৫১ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর থেকে রাজবাড়ীর জৌলুসের পতন শুরু হতে থাকে। রাজবাড়ীর সর্বশেষ জমিদার জগদীশ নাথ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে এই রাজবাড়ী অতীতের সাক্ষী হিসেবে টিকে রয়েছে। দিনাজপুর রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে কুমার মহল, আয়না মহল, রাণী মহল, লক্ষীগড়, আটচলা গড়, ঠাকুরবাড়ী, কালিয়াজিউ মন্দির, আঁতুর ঘর, রাণী পুকুর, চাপাতলার দিঘী ইত্যাদি।

নয়াবাদ মসজিদঃ দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামে ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমির উপর নয়াবাদ মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। নয়াবাদ মসজিদের দেয়ালে প্রাপ্ত ফলকের তথ্যমতে ১৭৯৩ সালে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তৎকালীন সময়ে রাজা বৈদ্যনাথ ছিলেন দিনাজপুর রাজ পরিবারের শেষ বংশধর। স্থানীয়দের মতে ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কান্তনগর মন্দির তৈরিতে আগত মুসলমান স্থপতি ও শ্রমিকদের মাধ্যমে নয়াবাদ মসজিদটি নির্মিত হয়। নয়াবাদ মসজিদের ছাদে তিন গম্বুজ ও চারকোণে অষ্টভুজাকৃতির ৪টি মিনার রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব ১ দশমিক ১০ মিটার। পশ্চিম দিকের ৩টি মেম্বারের বিপরীত পাশে ভিতরে প্রবেশের জন্য  ৩টি দরজা স্থাপন করা হয়েছে।

স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটঃ স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট বা বিনোদন কেন্দ্রটি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রায় ৪০০ একর জমির উপর স্থাপিত। সড়কপথে দিনাজপুর হতে স্বপ্নপুরীর দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোক চিত্ত বিনোদনের জন্য স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে আসে। এছাড়াও এখানে চলচিত্রের বিভিন্ন শ্যুটিং হওয়ায় স্বপ্নপুরী সহজেই মানুষের নিকট আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্রে গেলে দেখতে পাবেন-

  • কৃত্রিম লেক
  • পাহাড়
  • উদ্যান
  • বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি
  • চিড়িয়াখানা
  • মৎস্য দুনিয়া
  • শিশুদের খেলাধুলা সামগ্রী
  • ফুলের বাগানসহ আরও অন্যান্য।

রামসাগর দিঘীঃ রামসাগর দিঘী মানুষের তৈরি করা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দিঘী যা দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪ শত ৯২ বর্গমিটার এবং গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। দিঘীর পশ্চিম প্রান্তে একটি ঘাট রয়েছে। দিনাজপুর শহর হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে রামসাগর দিঘী অবস্থিত। রামসাগর দিঘীকে কেন্দ্র করে একটি মনোরম ও সৌন্দর্যমন্ডিত জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়াও এই দিঘী থেকে পূর্ণ চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

কান্তজির মন্দিরঃকান্তজির মন্দির বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। কেউ কেউ একে কান্তজিউ মন্দির অথবা কান্তনগর মন্দির নামে বেশি চেনে। আবার অনেকের কাছে কান্তজির মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির নামে বেশি পরিচিত। ১৮ শতকে নির্মিত মন্দিরটি দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর তেঁতুলিয়া সড়কের প্রায় ১ মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে কান্ত নগর গ্রামে অবস্থিত। কান্তজির মন্দিরের শিলালিপি থেকে পাওয়া সূত্র মতে, তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় এ  মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। অতঃপর ১৭২২ সালে প্রাণনাথ রায়ের মৃত্যুর পর তার পোষ্য পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন।

Your Answer

1 + 5 =

error: Content is protected !!