মহাস্থানগড় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনাঃ
উত্তরবঙ্গের শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান নামক স্থানে মহাস্থানগড় অবস্থিত। করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড়ের প্রাচীন নাম পুন্ড্রনগর।
এখানে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টীয় ১৫শ শতাব্দীর মধ্যে এই নগরী একটি সমৃদ্ধশালী জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল বংশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল এবং সর্বশেষ শাসক পরশুরামের সময় পর্যন্ত প্রাচীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ছিল।
মহাস্থানগড়ের বিস্তারিত বিবরণ
মুসলিম যুগের প্রথম দিকেও বিখ্যাত দরবেশ শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার এর বাসস্থান হিসেবে এ নগরের গুরুত্ব ছিল। তিনি পরশুরামকে পরাজিত করে তার অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করেন। এ নগরীর ধ্বংসাবশেষের বিবরণ প্রথম লিপিবদ্ধ করেন প্রত্নতাত্ত্বিক বুকানন হ্যামিলটন ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে। এছাড়াও চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং, আলেকজান্ডার কানিংহাম এ নগরী পরিদর্শন করেন।
১৮৭৯ সালে এটি প্রাচীন পুন্ডনগরের ধ্বংসাবশেষ বলে চিহ্নিত করেন। ১৯২৮ থেকে ১৯২৯ সালে প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদের পরিচালনায় মহাস্থানগড়ের খনন কাজ শুরু হয়। মহাস্থানগড়ের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার মাজার, ফররুখ শিয়ারের মসজিদ, ভাসু বিহার, গোবিন্দ ভিটা, শিলা দেবীর ঘাট, গোকুল মেধ ইত্যাদি। গোকুল মেধটি বেহুলার বাসরঘর হিসেবেও পরিচিত।
সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা হচ্ছে ৪৩ ফুট। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে এই ঢিবি খননকালে এখানে ১ শতক ৭২টি ভরা কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়। মূলতঃ এটি বৌদ্ধদের একটি কেন্দ্রীয় উপাসনালয় ছিল। আমাদের দেশে এ যাবৎকালে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন নগরের ধ্বংসাবশেষ হচ্ছে এই মহাস্থাগড়।