আটলান্টিক মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও।

প্রশ্ন উত্তরCategory: টুর ট্রাভেলসআটলান্টিক মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও।
Abdullah Al Faroque Staff asked 1 year ago


1 Answers
Abdullah Al Faroque Staff answered 1 year ago

আটলান্টিক মহাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণঃ

বিজ্ঞানীদের কাছে অপার এক রহস্যের নাম আটলান্টিক মহাসাগর। ১৯১২ সালে বিশ্বখ্যাত টাইটানিক জাহাজটি এই আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবেছিল। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এছাড়া বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনা ও বিমান দুঘর্টনার কারণে এই মহাসাগরটি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই মহাসাগরটি পৃথিবী ‍পৃষ্ঠের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এবং পৃথিবীর মোট জলভাগের প্রায় ২৯ ভাগ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
আটলান্টিক মহাসাগর এর আকৃতি ইংরেজি ‍S অক্ষরের মত। ইউরোপিয়ান মতাদর্শ অনুযায়ী পুরাতন পৃথিবী হতে নতুন পৃথিবীর মধ্যে পৃথককারী মাধ্যম হলো আটলান্টিক মহাসাগর (Atlantic Ocean)


এই মহাসাগরের পশ্চিমে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ এবং পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থান করছে। মহাসাগরটি উত্তর দক্ষিণে উত্তর মহাসাগর হতে দক্ষিণ মহাসাগর পর্যন্ত অবস্থান। আটলান্টিক মহাসাগরটি আমেরিকাকে ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বিভক্ত করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ এলাকা জুড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের আয়তন ১০ কোটি ৬৪ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে উত্তর আটলান্টিকের দৈর্ঘ্য ৪ কোটি ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার, দক্ষিণ আটলান্টিকের দৈর্ঘ্য ৪ কোটি ২ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার।

atlantic ocean

atlantic ocean

আটলান্টিক মহাসাগর এর আয়োতন

প্রান্তিক সমুদ্রসহ এ মহাসাগরের ‍উপকুলের দৈর্ঘ্য ১ লক্ষ ১১ হাজার ৮৬৬ কিলোমিটার। আটলান্টিকে গড় গভীরতা ৩ হাজার ৬ শতক ৪৬ মিটার বা ১১ হাজার ৯ শত ৬২ ফুট। পুয়ের্তে রিকো ট্রেঞ্চ হচ্ছে এই মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতম এলাকা যা মিলাওয়াকি ডিপ নামে পরিচিত। এর গভীরতা প্রায় ৮ হাজার ৩ শতক ৭৬ মিটার বা ২৭ হাজার ৪ শত ৮০ ফুট। প্রতিধ্বনি প্রযুক্তির সাহায্যে এক ব্রিটিশ নাবিক সর্বপ্রথম এর গভীরতা নির্ণয় করেছিলেন।

এই মহাসাগরে বিদ্যমান মোট পানির পরিমাণ ৩১ কোটি ৪ লক্ষ ১০ হাজার ৯ শত ঘন কিলোমিটার। আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবী পৃষ্ঠের মোট জলরাশির প্রায় ২৯ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জলরাশির তালিকায় এই মহাসাগরটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ সমুদ্রের পানি, উপকুলীয় বাতাস, পানিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং পানির স্রোত এসব দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত।

ocean map

ocean map

পৃথিবীর আবর্তন গতি, বায়ু প্রবাহ, সমুদ্র পানির লবণাক্ততার ঘনত্ব ও উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের উপরের জলরাশি নিয়মিতভাবে একস্থান হতে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয়ে থাকে। সমুদ্র পানির এই গতিকে সমুদ্র স্রোত বলে। আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি হচ্ছে কুমেরু স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, বেঙ্গুয়েলার স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, উপসাগরীয় স্রোত, উত্তর আটলান্টিক স্রোত ক্যানারির স্রোত ইত্যাদি।

আটলান্টিক এর নাম করন

আটলান্টিক মহাসাগরের অর্থ এ্যাটলাসের সমুদ্র। নেভিগেশন ও জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের গ্রীক দেবতা এ্যাটলাসের নামানুসারে অ্যাটলান্টিস নামের উৎপত্তি এবং যুগ যুগ ধরে চলা এই নাম শেষ পর্যন্ত আটলান্টিক নামে রুপ নেয়। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দক্ষিণ আটলান্টিককে বলা হতো ইথিওপিয়ান মহাসাগর। এই শব্দটির জন্ম প্রাচীন ইথিওপিয়া থেকে। তবে তারও আগে এটি ইংরেজদের কাছে Great Western Ocean নামে পরিচিত ছিল। তবে আটলান্টিক পুরনো বিশ্ব থেকে নতুন বিশ্বকে আলাদা করে এমনটি বিশ্বাস করেন ইউরোপিয়ানরা।

এই মহাসাগরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাগরগুলো রয়েছে- ভূমধ্যসাগর, বাল্টিক সাগর, কৃষ্ণ সাগর, লিবিয়ান সাগর, উত্তর সাগর, নরওয়েজিয়ান সাগর, সেলটিক সাগর, আইনিয়ান সাগর, ক্যারবীয় সাগর ইত্যাদি। উপসাগরের মধ্যে রয়েছে- মেক্সিকো উপসাগর, ব্যাফিলো উপসাগর, গেনি উপসাগর ইত্যাদি। পৃথিবীর অনেক প্রধান প্রধান নদীর জলধারা আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মিসিসিপি, নাইজার, অ্যামাজান, কঙ্গো, রাইন নদীর পানি এই মহাসাগরে পতিত হয়।

দুটি সাগর অথবা দুটি বিশাল জলরাশিকে সংযুক্তকারী সরু জলপথকে বলে প্রণালী। আটলান্টিক মহাসাগরের এরকম অনেকগুলো প্রণালী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ডেনমার্ক প্রণালী, ম্যাজেলান প্রণালী, ফ্রোরিডা প্রণালী ও ডোভার প্রণালী। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী ডোভার প্রণালী বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্র প্রণালী। জার্মানির কিয়েল খাল, ডেনমার্ক ও সুইডেনের মধ্যে অবস্থিত ওরেসুন প্রণালী, তুরস্কের ফসফরাস প্রণালী আটলান্টিক মহাসাগরে উল্লেখযোগ্য প্রবেশদ্বার।

কতটা পুরাতন এই মহাসগর ?

গবেষকদের ধারণা, জুরাসিক আমল থেকে এই মহাসাগরের গঠন শুরু হয়েছিল। ৯৮০ থেকে ৯৮২ সালের দিকে নর্থ সোভিয়েত যাত্রী জাহাজে করে এই মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। তবে ১৪৯২ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন বলে এই তথ্য সবার জানা। ১৯১৯ সালে বিমান পথেও পাড়ি দেয়া হয় আটলান্টিক মহাসাগর।

আটলান্টিক মহাসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ হচ্ছে গ্রীনল্যান্ড। যা আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বড়। ভুবন জয়ী সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট কে আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ক্যানাডি, দ্বীপ, আইসল্যান্ড, বার্বাডোস, হামা, ত্রিনিদাদ, ট্যোবাকো দ্বীপপুঞ্জ ছাড়াও অনেক ছোট বড় দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এই মহাসাগরে।

এই মহাসাগরের পানি বেশ উষ্ণ। সাধারণত পানির তাপমাত্রা নির্ভর করে কয়েকটি প্রভাবের উপর। প্রথমত, অক্ষাংশ ভেদে এর উষ্ণতা হেরফের হয়। যেমন মার্কিন উপকুলে এর উষ্ণতা প্রশান্ত মহাসাগরের চেয়ে ১৬০ ফারেনহাইট বেশী। অর্থাৎ এটি অনেক বেশি গরম। এরপর রয়েছে মৌসুমভেদে পরিবর্তন, সৌরশক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি। এসব কিছুই আটলান্টিকের পানির শীতলতা বা উষ্ণতার তারতম্য ঘটায়। তবে আটলান্টিক মহাসাগরের পানি সময় ও স্থানভেদে বরফে পরিণত হয়। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত বাল্টিক সাগর, ডেনমার্ক প্রণালী বরফে ঢাকা থাকে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, উত্তর আটলান্টিকের পানির তাপমাত্রা যদি ঘড়ির কাটার দিকে ঘোরে, তবে দক্ষিণ আটলান্টিকের পানির স্রোত ঘোরে বিপরীত দিকে। ফলে পানির তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে ৪ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে।

আটলান্টিক মহাসাগর হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত মহাসাগর। এর উন্মুক্ত পৃষ্ঠের পানির লবণাক্ততা অক্ষাংশ ও ঋতুভেদে ৩ দশমিক ৩ থেকে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাপমাত্রার মত লবণাক্ততাও নির্ভর করে অক্ষাংশ ও মৌসুমের উপর। অর্থাৎ জায়গা ভেদে এর লবণাক্ততার পরিমাণও কমবেশি হয়। এছাড়াও পানির লবণাক্ততার মানকে বাষ্পীভবন, বৃষ্টিপাত, নদীর প্রবাহ এবং সমুদ্রের বরফ গলন ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে। ভারী ক্রান্তি ও বৃষ্টিপাতের কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঠিক উত্তর দিকে সাধারণত পানির লবণাক্ততার মান কম হয়। আর উপকুল বরাবর নদীর অববাহিকায় লবণাক্ততার মান বেশি থাকে।

আটলান্টিকের পানির রঙ অন্যান্য মহাসাগরের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। অন্যান্য মহাসাগরের পানির রঙ নীলাভ হলেও আটলান্টিকের পানির রঙ দেখতে অনেক সবুজ রঙের। আমেরিকার পুব উপকুলীয় এলাকার পানি দেখতে সবুজ রঙের এবং এর পেছনে কারণও রয়েছে। এই পানিতে প্রচুর পরিমাণ শ্যাওলা ও উদ্ভিদের উপস্থিতি রয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু কিছু স্থানে সমুদ্রের মৃত উদ্ভিদ থেকে মিশ্রিত এক প্রকার রঞ্জক পদার্থের কারণে পানির রঙ সবুজ দেখা যায়।

আবার সূর্যের সাতটি রঙের মধ্যে এ মহাসাগরের মধ্যে সবুজ রঙের অধিক বিচ্ছুরণও পানির সবুজ বর্ণের কারণ। ভূমধ্য ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলনস্থলে পানির রঙ আলাদা আলাদা। তবে এর পানির রং সবুজ হলেও অনেক বেশি অন্ধকার। কেননা পানির তাপমাত্রা অনেক বেশি শীতল হবার কারণে এটি অনেক নোংরা এবং উদ্ভিদে পূর্ণ থাকে। পানিতে থাকা এসব নোংরা গাছপালা খুব দ্রুত সূর্যের আলো শোষণ করে। আর এ কারণে এতে এত বেশি অন্ধকার দেখায়। এছাড়া আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা থেকে যত গভীরে যাওয়া হয় ততই এর রঙ হালকা বাদামী থেকে সবুজ বাদামী রঙ ধারণ করে।

আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে কিছু জায়গার পরিবেশ বেশ বৈচিত্র্যময় এবং রয়েছে সমৃদ্ধ ইকোসিস্টেম। সেখানে রয়েছে নানারকমের কোরাল ও স্পঞ্জসহ বিচিত্র সব প্রাণী। অ্যাটলাস নামক একটি প্রকল্পের অধীনেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এই মহাসাগরের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। তার সাথে কাজ করছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের আরও ২৪টি প্রতিষ্ঠা। তবে আটলান্টিক মহাসাগরে বেশি পরিমাণে জাহাজ চলাচলের কারণে এর পানিতে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য মিশছে যা জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদগুলোর জন্য দিন দিন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে উঠছে।

জীববৈচিত্রের মত মৎস্য সম্পদের বিশাল ভান্ডার রয়েছে এই মহাসাগরে। মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্যতার দিক থেকে এই মহাসাগরের অবস্থান দ্বিতীয়। পৃথিবীর মোট মাছের প্রায় ২৫ শতাংশ আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ১৯৫০ সালের পর থেকে মৎস্য ভান্ডারগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। সারাবিশ্বে তিন ভাগে বিভক্ত মৎস্য ভান্ডারের দুটির অবস্থানই আটলান্টিকে। বাকি একটি ভান্ডারের অবস্থান ভারত ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে।

আটলান্টিক তীরবর্তী দেশগুলোর উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে এই মহাসাগর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। Natioal Ocenic & Atmosferic Administration এর অভিযানে আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে ২ মাইল এলাকা জুড়ে প্রায় ২ লাখ টন সোনার সন্ধান পাওয়া গেছে। অভিযান দল ধারণা করেছিল, প্রায় ৩ লাখ টন সোনা থাকতে পারে আটলান্টিকের নিচে। তবে এ সোনা পানির নিচ থেকে উত্তোলন করে সঠিক ব্যবহারের কোন উপায় এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাস, অপরিশোধিত তেল, মূল্যবান পাথরের বিশাল ভান্ডার এই আটলান্টিক মহাসাগর। ফ্লোরিডা প্রণালীর উত্তর কিউবা অববাহিকায় প্রায় ৮৭ কোটি ঘনমিটার পেট্রোলিয়াম, ৯.৮ ট্রিলিয়ন ঘটমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশেও এই মহাসাগরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আটলান্টিকের সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে ক্যারিবীয় উপকুল, ফ্লোরিডা বীচ, মিয়ামী বীচে লাভজনক পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম লানজারু উপকুলের কাছে সাগরতলে প্রথম যাদুঘর স্থাপন করেছে স্পেন। সাগরের ১৫ মিটার নিচে এমন পদার্থ দিয়ে ৩০০টি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যগুলি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে সাগরের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ ভাস্কর্যগুলো প্রায় ৩০০ বছর টিকে থাকবে।

পৃথিবীর রহস্যপুরী হিসেবে খ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। এখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। অনেকে মনে করে এগুলো উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে নিছক দুর্ঘটনা যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চালকের অসাবধানতা। এর বিপরীতে অনেকেই বিশ্বাস করেন, এর পিছনে দায়ী অতি প্রাকৃতিক কোন শক্তি বা বর্হিজাগতিক প্রাণীর উপস্থিতি।
আটলান্টিক মহাসাগরে চলাচলরত জাহাজগুলোতে জলদস্যুদের আক্রমণের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই বর্তমান সময়ে জাহাজগুলোর আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল অনেকটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে গিনি উপসাগরে ৪১টি বাণিজ্যিক জাহাজ জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সোমালিয়া জলদস্যুরা এই মহাসাগরের ভাসমান জাহাজগুলোতে আক্রমণ করে থাকে।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অন্যতম উৎসব হিসেবে পরিচিত আটলান্টিক মহাসাগর। প্রত্যেক শীতকালে এখানে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এদিকে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে উত্তর আটলান্টিকের পশ্চিম অংশে হারিকেনের প্রবণতাও অনেকাংশে বেশি থাকে। তবে শক্তিশালী বাতাস ও দুর্বল আন্তঃ ক্রান্তি অঞ্চলের কারণে দক্ষিণ আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় হয় না বললেই চলে। ২০১৯ সালের ২রা সেপ্টেম্বর আটলান্টিক ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় আঘাত হাতে ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র বাহামায়। এতে প্রায় ৮০ জনের মৃত্যু ঘটে। অনেক ঘরবাড়িও লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আর এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আটলান্টিক মহাসাগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পৃথিবীর পরাশক্তি দেশগুলোর মাঝখানে এ মহাসাগরটির অবস্থান হওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য সংক্রান্ত নানা কাজে আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্ব অনেকটা বেশি। পৃথিবী খ্যাত বিভিন্ন নগরীর প্রাণ ভোমরা বলা হয়ে থাকে এই আটলান্টিক মহাসাগরকে।

সমুদ্রপথে ইউরোপের সাথে আমেরিকার পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে আটলান্টিক মহাসাগরের কোন বিকল্প নেই। একইভাবে এশিয়া ও আফিকার সাথে আমেরিকার বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আটলান্টিকের গুরুত্ব অপরিসীম। আন্তঃ মহাদেশীয় সামুদ্রিক বাণিজ্য চালু হওয়ার পর থেকে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে আটলান্টিক মহাসাগরের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। পৃথিবীর প্রায় ১ শত ৩৩ টি দেশ সরাসরি এই আটলান্টিকের তীরে অবস্থান। সে কারণে আটলান্টিক মহাসাগরকে কেন্দ্র করে গড়ে বহু বন্দর ও পোতাশ্রয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া, স্পেনের বার্সেলোনা, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, জার্মানির হামবুর্গ, গ্রেট ব্রিটেনের লন্ডন, ফ্রান্সের লেহ হার্ভে, পর্তুগালের ব্রেসব্রোন ইত্যাদি। এছাড়াও আরও ছোট বড় বহু বন্দর গড়ে উঠেছে আটলান্টিক মহাসাগরকে কেন্দ্র করে।

সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশবিদদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে এই মহাসাগর। বিভিন্ন কারণে দূষণ হওয়া এই মহাসাগরের পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করলেও রোধ করা যাচ্ছে এ দূষণ।

অধিক পরিমাণে জাহাজ চলাচলের কারণে প্রতিদিন আটলান্টিক মহাসাগরের পানিতে মিশে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, যা মহাসাগরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার, পশুসম্পদ ও মানব বর্জ্যও মিশে যাচ্ছে।

তবে অন্যান্য দূষণের মধ্যে কৃষি, পৌর ও নগরের বর্জ্যও অনেক বেশি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। নগর বর্জ্যগুলো মূলত আসে পূর্ব আমেরিকা, দক্ষিণ ব্রাজিল এবং পূর্ব আর্জেন্টিনা থেকে। ক্যারিবীয় সাগর, মেক্সিকো উপসাগর, ভূমধ্য সাগর, দক্ষিণ উপসাগর থেকে মূলত তেল জাতীয় বর্জ্যগুলো আসে।

আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ আফ্রিকার উপকুলে আদিম মানুষের প্রথম আগমন শুরু হয়েছিল। ১ হাজারের কম মানুষ এখানে জীবিকার সন্ধানে এসেছিল। এ জায়গা ছিল খোলা ওলা মাছ, পশমযুক্ত শীল, অন্যান্য মাছ এবং সামুদ্রিক পাখির অন্যতম উৎস। এখানকার আদিবাসীরা এসব ভক্ষণ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

Your Answer

13 + 8 =

error: Content is protected !!