ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত পৃথিবীর সর্বাধিক পরিচিত এক কাঠামো আইফেল টাওয়ার। অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে এটি ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা। বর্তমানেও আইফেল টাওয়ার সর্বোচ্চ জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফরাসি বিপ্লবের শত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আইফেল টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। তবে টাওয়ারটি তৈরির আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, তৎকালীন বিশ্ববাসীর সামনে ফরাসিদের শিল্প দক্ষতা প্রদর্শন করা। ১৮৮৯ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে একটানা ৪০ বৎসর পর্যন্ত আইফেল টাওয়ার ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মানব নির্মিত স্থাপনা।
এই সুউচ্চ লৌহ কাঠামো ফ্রান্সের লিখিত প্রতীকে পরিণত হয়। ১ শত ৩০ বৎসর আগে নির্মিত এই টাওয়ারটিতে প্রতি বৎসর প্রায় ৭০ লক্ষ পর্যটক পরিদর্শন করেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ কোটি মানুষ আইফেল টাওয়ার দেখতে ফ্রান্সে ভ্রমণ করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার লোক আইফেল টাওয়ার পরিদর্শন করেন। টাওয়ারের চূড়ায় ওঠার জন্য ১ হাজার ৬ শত ৬৫টি সিঁড়ির ধাপ রয়েছে। তবে বেশির ভাগ পর্যটক লিফট ব্যবহার করেন। প্রতিবার আইফেল টাওয়ারের লিফট ব্যবহার করতে ১৯ ইউরো খরচ করতে হয় যা বাংলাদেশী টাকায় মূল্য ১ হাজার ৮ শত টাকা। তাই আইফেল টাওয়ার হলো অর্থের বিনিময়ে দেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় স্তম্ভ।
গুস্তাভ আইফেল নামক এক প্রকৌশলী আইফেল টাওয়ারের প্রথম নকশা তৈরি করেন। ইনি রেল চলাচলের উপযোগী সেতুর নকশা করতেন। উক্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গুস্তাভ আইফেল টাওয়ারের নকশা তৈরি করেন। ১৮ হাজার লোহার খন্ড জোড়া দিয়ে এই টাওয়ারটি নির্মিত করা হয়েছে। এই লোহার খন্ডগুলো জোড়া দিতে প্রায় ২৫ লক্ষ নাট বলটুর (লৌহ সরঞ্জামাদির) প্রয়োজন হয়। এটির উচ্চতা ১ হাজার ৫০ ফুট এবং এর ওজন ১ হাজার ১ শত টন। টাওয়ার নির্মাণ করতে ৩০০ জন শ্রমিকের ২ বছর ২ মাস সময় লেগেছিল। আইফেল টাওয়ার প্রতি ৭ বৎসর পর পর রংকরণের কাজ করা হয় এবং প্রতিবার এটি রং করতে ৬০ টন রং ব্যবহার করা হয়। প্রতি রাতেই টাওয়ারটিকে আপাদমস্তক আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। সম্পূর্ণ টাওয়ারটিকে আলোকসজ্জা করতে প্রায় ২০ হাজার লাইট জ্বালানো হয়।