ঘাসফড়িং এর রক্তসংবহনতন্ত্র কি? এটি কিভাবে কাজ করে? উক্ত তন্ত্রের গঠন উপাদান গুলো কি কি?
যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত দেহের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে বিভিন্ন পদার্থ পরিবহন করে, তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে।
ঘাসফড়িং এর সংবহনতন্ত্রকে মুক্ত সংবহনতন্ত্র (Open circulation) বলে। ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্র মুক্ত ধরনের। ঘাসফড়িং এর রক্ত নির্দিষ্ট নালীতে সীমাবদ্ধ না থেকে হিমোসিল ধরণের দেহগহ্বরের মাধ্যমে সরাসরি দেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে প্রবাহিত হয়। ঘাসফড়িং এর রক্ত সংবহনতন্ত্রে শুধু হূদপিন্ড ও ধমনী থাকে, কোন শিরা বা কৌশিকনালী থাকে না।
ঘাসফড়িংয়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র কয়েকটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- রক্ত বা হিমােলিম্ফ, হিমােসিল, হৃৎপিণ্ড, অ্যালারিপেশি ও আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গ।
ঘাসফড়িং এর সংবহন প্রক্রিয়া:
অ্যালারি পেশি, হৃদপিন্ড এবং আনুষঙ্গিক স্পন্দনশীল অঙ্গসমূহের সংকোচন প্রসারণের ফলে ঘাসফড়িংয়ের দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত প্রবাহিত হয়।
হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠগুলাে পশ্চাৎ থেকে সম্মুখদিকে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে থাকে। ঘাসফড়িংয়ের হৃদপিন্ডের স্পন্দন প্রতিমিনিটে ১০০ থেকে ১১০ বার ঘটে।
ঘাসফড়িংয়ের রক্তসংবহন প্রক্রিয়া নিম্নলিখিতভাবে ঘটে থাকে
১। অ্যালারি পেশিগুলোর সংকোচনে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অষ্টিয়ার মাধ্যমে হৃদপিন্ডে প্রবেশ করে।
২। পরে হৃদপিন্ড পর্যায়ক্রমে পশ্চাৎ দিক থেকে সম্মুখ দিকে সংকুচিত হওয়ায় রক্ত সমুখ দিকে প্রবাহিত হয় এবং অ্যাওর্টার মাধ্যমে মস্তকের সাইনাসে এসে পরে।
৩। অষ্টিয়ায় কপটিকা থাকায় রক্ত হৃদপিন্ড থেকে বাইরে আসতে পারে না এবং হৃদপিন্ডের প্রকোষ্টগুলাের সংযােগস্থলে কপাটিকা থাকায় রক্ত পিছন দিকে আসতে পারে না ।
৫। মস্তক থেকে কিছু রক্ত অ্যান্টিনায় প্রবেশ করে।
৫। এরপর রক্ত পশ্চাৎমুখী হয়ে পেরিনিউরাল সাইনাসে চলে আসে। পেরিনিউরাল সাইনাস থেকে রক্ত পদ ও ডানায় প্রবেশ করে।
৬। এই রক্ত পরবর্তীতে পশ্চাৎমুখী হয়ে পেরিভিসেরাল সাইনাসে প্রবেশ করে।
৭। এরপর হৃদপিন্ড যখন আবার প্রসারিত হয় তখন পেরিভিসেরাল সাইনাস থেকে রক্ত পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসে ফিরে আসে।
৮। পেরিকার্ডিয়াল সাইনাস থেকে অ্যালারি পেশিগুলোর সংকোচনে রক্ত অষ্টিয়ার মাধ্যমে পুনরায় হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। এভাবে চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।