চৌম্বক একে অপরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে এর দ্বার সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে। কোন চৌম্বকের যে স্থান জুড়ে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার ক্ষমতা থাকে সে স্থানকে বলা হয় চৌম্বকক্ষেত্র।
চৌম্বকক্ষেত্রের আকার একটি দন্ড চৌম্বক ও লোহার গুড়ার মাধ্যমে সহজেই পরীক্ষা করা যায়। একটি দন্ড চৌম্বকের চৌম্বকক্ষেত্র দেখার জন্য দন্ড চৌম্বককে সাদা কাগজের নিচে স্থাপন করি। এরপর লোহাগুড়ো গুলো ছেড়ে দিলে কোন কোন জায়গাতে চৌম্বকক্ষেত্র কাজ করছে সে লক্ষ্য করা যায়। যেসব জায়গায় লোহার গুড়োগুলো খুব ঘনভাবে অবস্থান করছে সেখানে চৌম্বকক্ষেত্রের মান অনেক বেশি আর যেসব লোহার গুড়োগুলো হালকাভাবে অবস্থান করে সে জায়গাগুলোতে অনেক কম চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ হয়।
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টানের E = mc2 এর সূত্র থেকে জানা যায়, ভর এবং শক্তি পরস্পরে রুপান্তরিত হয়। এরপর কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ শক্তি এবং চৌম্বক শক্তি পরস্পর রুপান্তরিত হয়। কোন তড়িৎক্ষেত্রের ভিতরে যদি ইলেকট্রন গতিশীল অবস্থায় থাকে তাহলে সেখানে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়।
ইলেকট্রন এবং পরমাণুর অন্যান্য কণাগুলোর যেমন ভর এবং বৈদ্যুতিক চার্জের মত মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে অনেকটা একইভাবে বেশিরভাগ কণারও আরেকটি অন্তর্বতী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ম্যাগনেটিক মোমেন্ট নামে পরিচিত। এ মোমেন্ট এর কারণেই কণাগুলো ক্ষুদ্র চৌম্বকের ন্যায় আচরণ করে। কার্ল এর পরীক্ষায় আমরা জানতে পারি যে, প্রতিটি পৃথক ইলেকট্রন এবং প্রোটন মূলত একটি ক্ষুদ্র চৌম্বক। এই ইলেকট্রন এবং প্রোটন হতেই পরমাণুর চৌম্বক ধর্মকে ব্যাখ্যা করা যায়।
আমরা জানি একটি পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে থাকে ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটন এবং তার চারপাশে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন ঘোরাফেরা করে। প্রোটনের কারণে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র ইলেকট্রনের তুলনায় প্রায় ১ হাজার গুণ দুর্বল। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াস ইলেকট্রনের চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি দুর্বল। এ কারণে পরমাণুর চৌম্বকত্বের উপরে নিউক্লিয়াস তেমন কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না।
একটি মৌলের ইলেকট্রনগুলো এবং নিউক্লিয়াস নিজেদের কক্ষের চারদিকে আবর্তন করে। আমরা জানি যে, চার্জের প্রবাহ মানেই বিদ্যুতের প্রবাহ। আর বৃত্তাকার পথে চার্জের প্রবাহের কারণে ম্যাগনেটিক মোমেন্ট তৈরি হয়। আর ম্যাগনেটিক মোমেন্ট মানেই বুঝা যায় সেটি চৌম্বকত্ব। প্রতিটি পরমাণু প্রতিটির পরমাণুর ম্যাগনেটিক মোমেন্টগুলি একই দিক প্রকাশ করে তাহলে সেটি চৌম্বকত্ব প্রকাশ করে। আর যদি ভিন্ন ভিন্ন দিকে থাকে একে অপরকে বিকর্ষণ করে। ফলে ঐ পদার্থটি চৌম্বক ধর্ম প্রদর্শন করে না।