ম্যানগ্রোভ বন কি
যে বনের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্রের লোনা পানিতে জোয়ার ভাটার পানিতে নিমজ্জিত হয় তাকে ম্যানগ্রোভ বন বলে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনের একটি উদাহরণ।
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলায় সুন্দরবনের বিস্তৃতি। এ বনের প্রধান প্রধান বৃক্ষ হলো: সুন্দরী, গড়ান, কেওড়া, ধুন্দল, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি।
ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য:
ক) বনের অধিকাংশ এলাকা দিনের মধ্যে দুবার জোয়ার ভাটার কারণে লোনা পানিতে নিমজ্জিত হয়।
খ) শ্বাসমূল: লবণাক্ত জলাভূমিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের শ্বাসগ্রহণে অসুবিধা হয় বলে এক বিশেষ ধরনের মূল মাটির ওপর বেরিয়ে আসে। এগুলিকে শ্বাসমূল (Pneumatophore) বলা হয়।
গ) ঠেসমূল : নরম কাদামাটিতে জোয়ার ভাটার জলপ্রবাহ সহ্য করে যাতে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তার জন্য এই অরণ্যের অধিকাংশ বৃক্ষের গাড়োয় ঠেসমূল (Stilt root) সৃষ্টি হয়।
ঘ) রসালোকান্ড : ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বৃক্ষের কাণ্ড রসালো প্রকৃতির।
ঙ) দীর্ঘমূল : এই জাতীয় উদ্ভিদের মূলগুলি খুব দীর্ঘ ও প্রসারিত হয়।
চ) চিরহরিৎ অরণ্য : এই অরণ্যে সারাবছরই সবুজ পাতা দেখা যায়।
ছ) জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম : গাছের বীজ কাদাময় জলাভূমিতে পড়ে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য গাছে থাকা অবস্থায় ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হয়, একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে। রাইজোফেরা নামক উদ্ভিদে দেখা যায়।
জ) সুন্দরবনের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৬৫১ থেকে ১৭৭৮ মিমি.
ম্যানগ্রোভ বনের গুরুত্ব:
সামুদ্রিক লোনা আবহাওয়া ও শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠে। সমুদ্রোপকূলে অবস্থিত এই অরণ্যের পরিবেশগত গুরুত্বগুলি হল –
- উপকূলবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করা : সমুদ্র উপকূল ও নদী বদ্বীপ অঞ্চলে বেড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ অরণ্যে নরম কাদা ও পলি সঞ্চিত হয় এবং উপকূলে আছড়ে পড়া বিনাশকারী তরঙ্গ তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সমুদ্রজলের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে উপকূল অঞ্চল জলপ্লাবিত হওয়া থেকেও এই অরণ্য রক্ষা করে।
- মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ করা : নরম, সিক্ত, কর্দমাক্ত মাটিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদ্ভিদগুলি তাদের মূল দ্বারা আঁকড়ে ধরে রাখে ও মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করে।
- জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা: ম্যানগ্রোভ অরণ্যে লুপ্তপ্রায় জীবদের সংরক্ষণ করা চলেছে। এগুলি তাই সংরক্ষিত বনভূমি।