পুঞ্জাক্ষি হলো অনেকগুলো ওমাটিডিয়ার (একবচনে ওমাটিডিয়াম) এর সমষ্টি। ওমাটিডিয়াম হলো কর্নিয়া, লেন্স ও আলোকসংবেদী কোষ দ্বারা নির্মিত ক্ষুদ্র সংবেদী একক, যা আলোর উজ্জ্বলতা ও রং শনাক্ত করতে সক্ষম। সন্ধিপদীদের যৌগিক চোখ বা পুঞ্জাক্ষি দ্বারা গৃহীত আলোক উপলব্ধি করতে পারে।
পুঞ্জাক্ষী বিশিষ্ট পতঙ্গদের দর্শন প্রক্রিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা:
ক) সুপারপজিশন বা মৃদু আলোতে দর্শন, খ) অ্যাপোজিশন বা উজ্জল আলোতে দর্শন
ক) সুপারপজিশন বা মৃদু আলোতে দর্শন:
মৃদু আলোয় রেটিনাল সিথের রঞ্জক কণিকা সংকুচিত হয়ে কর্নিয়ার দিকে ঘণীভূত হয় এবং ক্রিস্টালাইন কোণের অধিকাংশ অনাবৃত হয়ে পড়ে। উলম্ব আলোকরশ্মি একটি ওমাটিডিয়ামের কর্নিয়ার ভেতর প্রবেশ করে তার র্যাবডোমে পৌঁছালেও তির্যক আলোকরশ্মি একটি ওমাটিডিয়ামের ক্রিস্টালাইন কোণের অনাবৃত অংশের মধ্য দিয়ে পাশের ওমাটিডিয়ামের র্যাবডোমে পৌঁছায়।
এই ক্রিয়ার ফলে প্রতিটি র্যাবডোমে তার নিজস্ব কর্নিয়া থেকে আগত আলোকরশ্মি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়ামের কর্নিয়া থেকেও আলোকরশ্মি পেয়ে থাকে। পুঞ্জাক্ষির ওপর কোনো বস্তুর বিভিন্ন অংশের প্রতিবিম্বগুলো একে অপরের ওপর পড়ায় সম্পূর্ণ বস্তুটির অস্পষ্ট প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়। সাধারণত নিশাচর পতঙ্গে এ ধরনের পুঞ্জাক্ষি দেখা যায়।
খ) অ্যাপোজিশন বা উজ্জল আলোতে দর্শন:
উজ্জ্বল আলোয় প্রতিটি ওমাটিডিয়াম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। উজ্জ্বল আলোয় রেটিনাল সিথের কোষের রঞ্জক পদার্থ ক্রিস্টালাইন কোণের নিচের দিকে এমনভাবে ছড়িয়ে যায়, যাতে তার চারদিকে একটি কালো পর্দার সৃষ্টি হয়। ফলে, একটি ওমাটিডিয়াম কেবল নিজস্ব কর্নিয়া থেকে আগত লম্বভাবে প্রতিফলিত রশ্মিই গ্রহণ করতে পারে। তির্যকভাবে আগত পার্শ্ববর্তী ওমাটিডিয়ামের আলোকরশ্মি আইরিশে রঞ্জক পদার্থে শোষিত হয়।
এই ক্রিয়ার ফলে একটি ওমাটিডিয়াম কোনো বস্তুর অংশবিশেষের প্রতিবিম্ব ধারণ করে এবং বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন অংশের পৃথক ও সুস্পষ্ট প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: ম্যান্টিস চিংড়ি বা চিংড়িবাহারের দর্শনেন্দ্রিয় এ ধরনের পুঞ্জাক্ষির একটি উত্তম দৃষ্টান্ত।