Customize Consent Preferences

We use cookies to help you navigate efficiently and perform certain functions. You will find detailed information about all cookies under each consent category below.

The cookies that are categorized as "Necessary" are stored on your browser as they are essential for enabling the basic functionalities of the site. ... 

Always Active

Necessary cookies are required to enable the basic features of this site, such as providing secure log-in or adjusting your consent preferences. These cookies do not store any personally identifiable data.

No cookies to display.

Functional cookies help perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collecting feedback, and other third-party features.

No cookies to display.

Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics such as the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.

No cookies to display.

Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.

No cookies to display.

Advertisement cookies are used to provide visitors with customized advertisements based on the pages you visited previously and to analyze the effectiveness of the ad campaigns.

No cookies to display.

সৌদি আরবের তায়েফ নগরীর বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাই।

প্রশ্ন উত্তরCategory: টুর ট্রাভেলসসৌদি আরবের তায়েফ নগরীর বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাই।
Abdullah Al Faroque Staff asked 1 year ago


1 Answers
Abdullah Al Faroque Staff answered 1 year ago

সৌদি আরবের ঐতিহাসিক এবং অপরুপ সৌন্দর্যের শহর তায়েফ গোলাপ ফুলের শহর হিসেবে খ্যাত । মক্কা নগরীর দক্ষিণ পূর্ব কোণে ভূ-পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১ হাজার ৮ শত ৭৯ মিটার উচ্চতায় হেজাজ পর্বতমালার ধারে এই শহরটি অবস্থান। তায়েফ শহরের কথা পবিত্র কোরআন মাজীদে পরোক্ষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। জানা যায় যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়তপ্রাপ্ত হওয়ার পর মক্কার উপকণ্ঠে তায়েফ নগরীতেই প্রথম এসেছিলেন।


তায়েফ শহরে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বনু ছাকিফ গোত্রের মানুষের বসবাস ছিল। অনেকের মতে, ইয়েমেনের হিমিয়ার রাজ্য থেকে ইথিওপিয়ান খ্রিষ্টানরা ইহুদিদের বিতাড়িত করে। বিতাড়িত ইহুদিরা এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তায়েফ শব্দের প্রকৃত অর্থ পরিভ্রমণকারী অথবা ঘিরে রাখা। প্রকৃতপক্ষে বনু ছাকিফ গোত্রের নির্মিত একটি প্রাচীরের নামানুসারে তায়েফ নগরীর নামকরণ করা হয়েছে।

একসময় তায়েফ শহরটি আরবদের মাঝে পৌত্তলিকতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বহুল পরিচিত ছিল। এ শহরটিতে তৎকালীন যুগের তিন প্রধান দেবীর একজন লাত দেবীর মূতি ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীকালে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি মক্কার পাশাপাশি হেজাজের কোল ঘেষে তায়েফ শহরের ইসলামে বাণী প্রচার করতে আসেন। কিন্তু তায়েফে বসবাসকারীরা লোকজন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী হিসেবে গ্রহণ করেননি। প্রথমবারের মত তিনি তায়েফে এলে তায়েফবাসীরা তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করত। পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি খারাপের দিকে মোড় নেয়। এ সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেহ রক্তে রঞ্জিত হয়। তায়েফবাসীর এরুপ রূঢ় আচরণের কারণে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নবীকে সাহায্য করা এবং তায়েফবাসীর ধ্বংসের জন্য ফেরেশতা পাঠালে নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। তিনি সেদিন তায়েফবাসীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন।

তায়েফবাসীর অতিমাত্রার ঔদ্ধত্যের কারণে ৬৩০ এবং ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি  সময়ে হুনাইনের যুদ্ধ, তায়েফের ব্যর্থ অবরোধ এবং তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আর এ কারণে বনু ছাকিফ গোত্রের সদস্যগণ পরবর্তী সময়ে তায়েফে ইসলাম প্রচারে জন্য হযরত ‍মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে আলোচনা করার জন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, মূর্তিপূজার যুগের সকল নির্দশন এবং দেবী লাতের মূর্তি ধ্বংসের মাধ্যমে তায়েফে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে।

তায়েফ নগরীতে পরবর্তী সময়ে অটোম্যান শাসনের সূচনা শুরু হয়। কিন্তু ১৯১৬ সাল হতে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত আরব বিদ্রোহের কারণে অটোম্যান শাসক এ অঞ্চল হতে প্রত্যাবর্তন করে। এর কয়েক বছর পর তায়েফ নগরী সৌদি আরবের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ইতিহাসের পাতায় তায়েফ নগরী বিভিন্ন কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই তায়েফের বনু ছাকিফ গোত্রে নবী করীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুধ মাতা হালিমা এবং সাদিয়ার ঘরে লালিত পালিত হয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে ঐসব বাড়িঘরের কোন অস্তিত্ব নেই। তবুও একটি পাহাড়ের পাদদেশকে অনেকে তাঁর বসতভিটার অংশ মনে করেন এবং সেখানে গিয়ে তাঁরা সালাত আদায় করেন।

ঐতিহাসিক অটোম্যান শাসন আমল এবং বিভিন্ন যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন এখনও খুঁজে পাওয়া যায় পুরো শহর জুড়ে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ছোট বড় অনেক প্রাচীন দুর্গ। ঐতিহাসিক যুগের স্বাক্ষী তায়েফ নগরীর বিভিন্ন দুর্গগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। মুসলিম সভ্যতার বিস্ময়কর উদাহরণ হিসেবে স্থাপত্য শিল্পের প্রাচীন দুর্গগুলো আজও বিদ্যমান। দুর্গগুলোর নকশা দেশে অনেকই অবাক হয়ে যান।

Taif City Cable Car

Taif City Cable Car

তায়েফ শহরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রিসোর্ট, পার্ক এবং অবকাশ যাপন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের আনন্দ বিনোদনের মাঝে সময় কাটানো এবং এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে গমনের জন্য ক্যাবল কারের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। তায়েফ নগরীর ঐতিহাসিক আবাসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শুভ্রা প্যালেস। ১৮৫৮ সালে প্রথম ২ তলা বিশিষ্ট প্যালেসটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীকে মক্কার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলী পাশা এই প্যালেসটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেন। সৌদি আরব আশেপাশের মুসলিম জনপদকে নিজেদের শাসনাধীনে নেয়ার পর শুভ্রা প্যালেসটি সৌদি রাজা বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তৎপরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে শুভ্রা প্যালেসকে একটি জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়।

Taif City Sibrha Palace Museum

Taif City Sibrha Palace Museum

তায়েফ নগরীতে প্রবেশের পথে ওকাস নামক স্থানে সুমিষ্ট ফলা-ফলাদির বিশাল দোকান এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলার ময়দান। এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়ার বিনিময়ে মরুভূমির জাহাজ উটে চড়ে সওয়ার করা যায়। এ নগরীর আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে দেশটির গোলাপের বাগানে পরিপূর্ণ। প্রতি বছর বসন্তকালে গোলাপ ফুলে ভরে যায় সৌদি আরবের এই নগরী। সাধারণত তায়েফ নগরীতে গোলাপ ফুলের চাষ করা হয় এপ্রিল মাসে। পবিত্র কাবাঘরের বাহিরের দেয়ালগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে এসব গোলাপ ফুলের নির্যাস থেকে বানানো তেল ব্যবহার করা হয়। প্রতি বৎসর হজ্জ ও ওমরাহ করতে সৌদি আরবে ভ্রমণ করা লাখো মুসল্লিদের কাছে গোলাপের তেল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রতি বৎসর এই শহরটিতে মরুভূমির বুকে প্রায় ৩০ কোটি গোলাপ ফুলের চাষ করা হয়। পুরো নগরী জুড়ে ছোট এবং বড় মিলে প্রায় আটশতটি গোলাপ ফুলের বাগান আছে। এগুলোর ভিতর অনেক বাগানেই পর্যটকদের ভিতরে প্রবেশাধিকার রয়েছে।

Taif City Rose Garden

Taif City Rose Garden

তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে এসে নির্যাতনের শিকার হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও জায়িদ ইবনে হারিজ (রা) এক ইহুদির বাগানে বিশ্রামরত ছিলেন। এই বাগানের জায়গাটিতে অটোম্যান আমলেই আল কান্তারা মসজিদ গড়ে তোলা হয়। এই মসজিদটি নির্মাণে আব্বাসীয় শাসনামলের স্থাপত্যশৈলী অনুকরণ করা হয়েছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত মসজিদটির ভিতরের কারুকার্যগুলো অক্ষত। মসজিদটির মিনারের উপরে উঠলে এর আশেপাশের শস্যের ক্ষেত এবং পাহাড়ী মনোমুদ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সবকিছু মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাসের অনবদ্য স্বাক্ষী এই তায়েফ। পবিত্র হজ্ব পালনে অথবা সৌদি আরবে ভ্রমণ করতে আসা মানুষদের একবারের জন্য হলেও এই শহরটি ভ্রমণ করা প্রয়োজন।

Your Answer

8 + 11 =