লন্ডনের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের একটি নিদর্শন হল টাওয়ার ব্রীজ। লন্ডনের টেমস নদীর উপরে অবস্থিত টাওয়ার ব্রীজটি শত বছর থেকে দাঁড়িয়ে আছে স্বগৌরবে। লন্ডনের যতগুলো সৌন্দর্যময় পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে তার মধ্যে টাওয়ার ব্রীজটি অন্যতম।
লন্ডন টাওয়ার ব্রীজ
এই ব্রীজটিতে সুউচ্চ দুটি টাওয়ার রয়েছে। একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব ২০০ ফুট। এই টাওয়ার দুইটি ব্রীজটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
প্রকৃতপক্ষে এই টাওয়ার দুটির জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে টাওয়ার ব্রীজ। লন্ডনের টাওয়ার ব্রীজটি এতটাই বিখ্যাত যে, নাটক, সিনেমা বা কোথাও লন্ডন শহর দেখানো হলে এই ব্রীজটিই পর্দায় সবার প্রথমে উঠে আসে।
টাওয়ার ব্রীজের ঐতিহাসিক বর্ণনা:
টেমস নদীর দুই পার্শ্বের মানুষকে একত্র করার জন্য ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ২৪৪ মিটার বা ৮ শত ১ ফুট, প্রস্থ ৩২ মিটার ও উচ্চতা ৬৫ মিটার বা ২ শত ১৩ ফুট। সাইকেল অথবা গাড়িতে করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার দর্শনার্থী পরিভ্রমণ করেন।
এই ব্রীজে ২০ কিলোমিটার বেগের চেয়ে অতিরিক্ত গতিতে কেউ গাড়ি চলাচল করতে পারবেন না। যদি কেউ তা অমান্য করেন তাহলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ব্রীজটিতে গাড়ির ওজন, উচ্চতা এবং গতিবেগ নির্ণয়ের ক্যামেরা বসানো আছে। এই ক্যামেরার মাধ্যমে আইন রক্ষাকারী বাহিনী বুঝতে পারে কত কিলোমিটার গাড়িটি ব্রীজ পার হচ্ছে।
টাওয়ার ব্রীজের পাশে লন্ডন ব্রীজ নামে একটি ব্রীজ অবস্থিত। টাওয়ার ব্রীজ ও লন্ডন ব্রীজ পাশাপাশি হওয়ায় পর্যটকরা অনেক সময় ভুল বলে থাকেন। এই ব্রীজটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ১৮৭৬ সালে। ব্রীজটির নকশা আহবান করা হয়ে পঞ্চাশজন স্থপতি তাদের নিজেদের ডিজাইন জমা প্রদান করেন। এগুলোর মধ্যে ১৮৮৪ সালে স্যার হর্জ জনের ডিজাইনটি সিলেক্ট করা হয়।
ডিজাইন চুড়ান্ত হওয়ার পর ১৮৮৬ সালে ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং সমাপ্ত হয় ১৮৯৪ সালে। প্রায় ৭ বছরে ৪৩২ জন শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ব্রীজটির কাজ শেষ করেন। নির্মাণ শেষে ১৮৯৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা এ্যাডওয়ার্ড ফোর ও রাণী আলেকজান্ডার ব্রীজটি উদ্বোধন করেন। ব্রীজটি নির্মাণ করতে তৎকারীন ১১ লক্ষ ৮৪ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছিল। সম্পূর্ণ ব্রীজটি নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার টন স্টীলের প্রয়োজন হয়। টাওয়ার ব্রীজের সৌন্দর্য অনেকের নিকট আকর্ষণীয় হলেও তৎকালীন সময়ে অনেকে একে পছন্দ করেননি।
টাওয়ার ব্রীজে একটি আকর্ষণীয় বিষয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে- গাড়ি চলাচলের যে রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে সেটি আলাদা করে উপরের দিকে তুলে নেওয়া যায়। এর কারণ হলো যখন কোন বড় নৌযান ব্রীজের নিকটবর্তী হয় তখন যেন অনায়াসেই ব্রীজটি পার হতে পারে। এই সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ব্রীজটি সর্বোচ্চ ৮৬০ পর্যন্ত খুলতে পারে।
টাওয়ার ব্রীজটি প্রতি বছর ১ হাজার বারের চেয়ে বেশি বার খোলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে যতগুলো নান্দনিক সৌন্দর্য ও বতিক্রমধর্মী ব্রীজ রয়েছে তার মধ্যে টাওয়ার ব্রীজের খ্যাতি অন্য কোন ব্রীজে নেই। টাওয়ার ব্রীজের উপরে ফুট ব্রীজ তৈরি করা আছে। এটি নির্মাণ করা হয়েছে পথযাত্রীদের সুবিধার জন্য। যখন টাওয়ার ব্রীজটির মাঝখানে খুলে দেওয়া হয় তখন যেন পথযাত্রীরা এটি ব্যবহার করতে পারে।
তবে পথযাত্রীরা এটি বেশিদিন ব্যবহার করতে পারেনি। বিভিন্ন সমস্যা থাকার জন্য ১৯১০ সালে উপরের ফুট ব্রীজটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে এটি আগ্রহী পর্যটকদের জন্য খোলা আছে। ফুট ব্রীজে ওঠার জন্য সিঁড়ি এবং লীফট দুটোই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
টাওয়ার ব্রীজ ঘুরে দেখার জন্য গাইডের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গাইড সম্পূর্ণ ব্রীজটি ঘুরিয়ে দেখান। পর্যটকরা গাইডের মাধ্যমে ব্রীজের ভিতরে প্রবেশের পাশাপাশি ইঞ্জিনরুমে ঢোকাসহ ছোটোখাটো অনেক বিষয় জানতে পারেন। পর্যটকদের ব্রীজটিতে প্রবেশের পূর্বে টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।