এসইও কি? ফুল আপডেট 2019
প্রারম্ভিকা: আমি ব্লগিং করছি গত ৮ মাস যাবত। প্রথম দিকে শুরু করেছিলাম ব্লগারেকিছ ব্যক্তিগত ব্লগ নিয়ে। বিভিন্ন কমিউনিটি ব্লগ যেমন, সামহোয়ারইনব্লগ, টেকটিউনসে ও মাঝে মাঝে যেতাম। বেশ কিছুদিন আগে সামুতে বিভিন্ন লেখার মাঝে এডসেন্স বিষয়ক কয়েকটা লেখা পড়লাম। মূলত তারপর থেকেই এডসেন্সের ভূত মাথায় চাপলো।
আমার প্রফেশনাল ব্লগিং জগতে আসা মূলত এই এডসেন্সের কথা মাথায় রেখেই। গত ৬ মাসে এডসেন্স নিয়ে অনেক পড়াশুনা করেছি। প্রচুর ই-বুক পড়েছি। বেশ কতগুলা ভিডিও টিউটোরিয়ালও দেখেছি। এভাবে আস্তে আস্তে এডসেন্সের সাথে সাথে সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশনও (এস. ই. ও) শিখতে শুরু করলাম।
এসইও ছাড়া এডসেন্স আসলে অচল। আমি এডসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার আগে সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন এসইও (Search Engine Optimization) সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। প্রফেশনাল ব্লগিং এরকম একটা জিনিস, যেখানে আপনাকে একটা ভিজিটর ম্যনেজ করতে হবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে। আশানুরুপ ভিজিটর পেতে চাইলে অবশ্যই সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা উচিত।কারন ভিজিটর না থাকলে এডসেন্সের কথা ভাবা বোকামী।
এসইও (SEO) সম্পর্কিত আমার ধারনাগুলো:
এস. ই. ও হচ্ছে একটি পদ্বতি যার মাধ্যমে বিভিন্ন সার্চ ইন্জিন যেমন গুগল, ইয়াহু বা বিংয়ের বিভিন্ন আভ্যন্তরীন প্যারামিটারগুলি ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট বা এর কোন একটি পেজকে সার্চ ইন্জিন রেজাল্ট পেজে কত উপরে, কত নাম্বারে বা তা কত ভালো দেখাবে তা নিশ্চিত করা যায়। সাধারনত দুই ধরনের এস ই ও রয়েছে। ১. অনপেজ সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন, ২. অফ পেজ সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন।
এস ই ও এর কতগুলি বেসিক জিনিস আছে যেগুলি প্রত্যেকটা ব্লগারের জন্য জানা আবশ্যিক। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো-
১। লেখার উন্নত মান (Unique & Quality Content):
এর চেয়ে বড় এস. ই. ও. কিছুই হতে পারে না। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি- আপনি যদি এসইও সম্পর্কে কিছু নাও জানেন, কিন্তু নিয়মিত খুব ভালো লিখে যেতে পারেন তবে আপনার ব্লগ বা পোস্টের কোন এসইও দরকার পড়ে না। উন্নত লেখা নিজেই একটা এসইও। নিয়মিত ভালো এবং অনন্য লেখা লিখে যেতে পারলে সার্চ ইন্জিন সমূহ নিজে থেকেই আপনার ব্লগটা চিনে নিবে এবং রেজাল্ট পেজে প্রথম দিকে রাথবে। মনে রাখবেন, সার্চ ইন্জিনগুলা এতটা বোকা নয় যে প্রচুর অযাচিত কীওয়ার্ড দিয়ে বানানো একটা লেখাকে সার্চ ইন্জিনে প্রথম দিকে স্থান দিয়ে নিজের ইমেজ নষ্ট করবে। আপনি নিজেকে একজন সাধারন ভিজিটর হিসেবে চিন্তা করুন। মনে করুন কোন [ এসইও অপ্টিমাইজড কন্টেন্ট ] একটা সমস্যায় পড়েছেন এবং গুগলে সার্চ দিলেন। গুগল আপনাকে কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কয়েকটা লিংক দিলো যেগুলাতে গিয়ে দেখলেন – লেখাটি লিখা হয়েছে প্রচুর অনাকাংখিত রিপিটেড কীওয়ার্ড দিয়ে, যার ফলে লেখাটির ভিতর থেকে মূল কথাটিই খুজে বের করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আপনি নিশ্চয়ই তখন গুগলের উপর বিরক্ত হবেন!!! সার্চ ইন্জিনগুলোও এ কথাটি জানে। অযাচিত কীওয়ার্ড দিয়ে আপনি হয়তো প্রথমদিন রেজাল্ট পেজে আসতে পারবেন, কিন্তু খুব দ্রুতই আবার হারিয়ে যেতে হবে।
তার চেয়ে বরং নিয়মিত ভালো লিখুন। আপনার লেখা রেজাল্ট পেজে স্থায়ী হবে এবং তুলনামুলকভাবে লাভবান হবেন বেশী।
২। কী–ওয়ার্ড (Keyword):
কীওয়ার্ড হচ্ছে একটি অর্থবোধক শব্দ যা মানুষ সার্চ ইন্জিনের সার্চ বক্সে টাইপ করে নির্দিষ্ট কোন তথ্য খুজে বের করার জন্য। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি- মানুষ খুব কম সময়ই একটি মাত্র শব্দ দিয়ে সার্চ করে। ( এসইও নিয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন ) বরং মানুষ এখন অনেক বেশী স্পেসিফিক তথ্য চায়। এজন্য তারা গ্রুপ কী-ওয়ার্ড (Phrase Keyword) ব্যবহার করে। এজন্য আপনি যদি “ডিজিটাল ক্যামেরা” কী-ওয়ার্ড না দিয়ে যদি “ক্যাননের ডিজিটাল ক্যামেরা” কীওয়ার্ডটি ব্যবহার করেন তাহলে অনেক ভালো ফল পাবেন। এক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হলো- আপনার Global Competitor কমে যাবে ফলে খুব সহজেই রেজাল্ট পেজের প্রথম দিকে স্থান পাবেন।
৩। আভ্যন্তরীন লিংক বিন্যাস (Internal Link Building):
আমার কাছে এ ব্যাপারটা বেশ ফলপ্রসু মনে হয়েছে। আপনি যদি বিখ্যাত তথ্যভিত্তিক সাইট “উইকিপিডিয়া” ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জানেন যে বিভিন্ন সার্চ ইন্জিনে তাদের স্থান বরাবরই প্রথম। তাদের আভ্যন্তরীন লিংক বিন্যাসটা খেয়াল করেছেন? এক কথায় অসাধারন। ( এসইও নিয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন ) আপনি কেনই বা এ ট্রিকসটা ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন? Internal Linking যেমন একটি পেজ আরেকটি পেজকে ব্যকলিংক দেয় তেমনি সার্চ ইন্জিন রোবটকে প্ররোচিত করে এক লিংক থেকে আরেক লিংকে জাম্পিং করে ইন্ডেক্স করার জন্য। আর নতুন লেখার সাথে সমজাতীয় পুরনো লেখার লিংকিং এর কারনে সবগুলো পেজই সার্চ ইন্জিনের নখদর্পনে থাকে যা আপনার ব্লগের রেংক বাড়ানোর ক্ষেত্রে দারুন সহায়ক।
৪। বিভিন্ন ট্যাগ এবং মেটার উপযুক্ত ব্যবহার ( Using Meta & Different Tags):
প্রত্যেকটা ব্লগারের এই স্টেপটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা জরুরী। পোস্ট টাইটেল অবশ্যই H1 এবং পোস্টের সাব হেডিং বা পয়েন্টগুলা H2 ট্যগের ভিতর রাখতে হবে। তবে সার্চ ইন্জিনগুলা H1 ট্যাগটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখে। পোস্ট ইমেজ ব্যবহার করুন এবং পোস্টটি যে কীওয়ার্ডটির উপর ভিত্তি করে লিখেছেন, ( এসইও নিয়ে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন ) সেই কীওয়ার্ডটি ইমেজের Alt Tag এ বসিয়ে দিন। পোস্টের টাইটেল ট্যাগে ইংরেজী And, Or, &, The এই শব্দগুলি পরিহার করে ভালো কীওয়ার্ড সমৃদ্ধ ৬০ শব্দের মধ্যে একটি বাক্য বসিয়ে দিন। মেটা ডেসক্রিপশন হতে হবে ১৬০ শব্দের মধ্যে এবং এক্ষেত্রে কীওয়ার্ডটি বাক্যের শুরুতেই বসাবার চেষ্টা করুন।
পোস্ট ইমেজ ব্যবহার করুন এবং পোস্টটি যে কীওয়ার্ডটির উপর ভিত্তি করে লিখেছেন, সেই কীওয়ার্ডটি ইমেজের Alt Tag এ বসিয়ে দিন। পোস্টের টাইটেল ট্যাগে ইংরেজী And, Or, &, The এই শব্দগুলি পরিহার করে ভালো কীওয়ার্ড সমৃদ্ধ ৬০ শব্দের মধ্যে একটি বাক্য বসিয়ে দিন। মেটা ডেসক্রিপশন হতে হবে ১৬০ শব্দের মধ্যে এবং এক্ষেত্রে কীওয়ার্ডটি বাক্যের শুরুতেই বসাবার চেষ্টা করুন।
৫। ইউআরএল কাঠামো :
ইউআরএল কাঠোমো অবশ্যই পোস্ট নামে থাকাটা এস ই ও তে রেকমেন্ডেড। আর অবশ্যই ইউআরএল ছোট ও সুন্দর হতে হবে। [এসইও এর জন্য এংকর টেক্সট,ব্যাকলিংক ] বেশি বোরো ইউআরএল গুগল পছন্দ করে না।
থিম ও সাইডবার : মোবাইল রেস্পন্সিভ ও ক্লিন থিম নিবেন। একটা কথা মনে রাখবেন থিম এ নেভিগেশন যাতে ঠিক থাকে অর্থাৎ সাইড বার ও সার্চ বাক্স তা যাতে ঠিক থাকে।
৬। অফ-পেজ এসইও:
অফ-পেজ এস ই ও হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট এর একটি পেজ বা পোস্টকে মার্কেটিং করার কৌশল। আপনি অন্যের ওয়েবসাইট এ যেয়ে নিজের জন্য লিংক নিয়ে আসাটাই হচ্ছে অফপেজ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে গুগল কেমন চোখে দেখে ?
অন্যের ওয়েবসাইট তা যদি আপনার নিশের সাথে মিলে যায় তবে লিংক নিলে গুগল মামা মাইন্ড করবে না বরং এইটা ভালো চোখে দেখে। কিন্তু এলোমেলো যেকোনো সাইট থেকে লিংক করলে গুগল খারাপ চোখে দেখে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আপনি সাইন্স এর স্টুডেন্ট আপনার বন্ধু যদি সব গ্রুপের স্টুডেন্টদের সাথে চলা ফেরা করেন তাহলে কিন্তু বুঝা যাবে না আপনি আসলে কোন গ্রুপ এর ! আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল যদি শুধু সাইন্স ব্যাক রাউন্ড হয় তবে সহজেই আপনাকে বুঝা যাবে। গুগল তার রাঙ্ক ব্রেন দিয়ে আপনার লিংক ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে বুঝার চেষ্টা করে থাকে। তাই লিংক বিল্ডিং হতে হবে রিলেভেন্ট।
৭। মার্কেটিং (Marketing):
এটা অফলাইন এস. ই. ওর একটি অংশ। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে বিভিন্ন সোসাল নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন এবং বুকমার্কিং সাইট যেমন ডেলিশাস, ডিগ, রেডিট ব্যবহার করে ব্লগ বা ওয়েবসাইটের প্রমোট করাকেই মার্কেটিং বোঝায়। আর্টিকেল সাবমিশন এবং কমেন্টিং করাও মার্কেটিং এর একটি অংশ। একটি পোস্ট লিখার পর উপরোক্ত মার্কেটিং সাইটগুলা ব্যবহার করে আপনার লিংক সাবমিট করুন।
এই হলো সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশনের বেসিক বিষয়। একটি পোস্ট লেখার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলা মাথায় থাকলে আপনার সাইট হবে Well-Optimized. ফলে দ্রুত ভালো পরিমান ভিজিটর পেতে শুরু করবেন।
অবশেষে একটা কথা বলতে চাই, সেটি হচ্ছে – “ধৈর্য্যধারন করুন এবং লেগে থাকুন”। ইন্টারনেটের এই বিশাল ভুবনে নিজের জন্য একটু জায়গা অবশ্যই করে নিতে পারবেন যদি আপনার এই ধৈর্য্যধারন করার ধৈর্য্যটুকু থাকে।