কিভাবে ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয়?
দেশের বাজারে বর্তমানে তফসিলী ব্যাংক সমূহে কাজ করছে বিশাল এক জনগোষ্ঠী। সাধারণত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ হলেও অনেকে ফ্রেশার হিসাবে এতে যোগদান করে থাকেন। সেই সাথে এই সেক্টরে কাজ করার জন্য তাদের অনেক ধারণা নিতে হয়। কিন্তু এতে অনেক কম রিসোর্স এর দেখা মেলে অনলাইনে। তাই জানা হয় অসম্পূর্ণ। তাই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। প্রায়ই আমরা শুনে থাকি তফসিলী ব্যাংক বা তালিকাভুক্ত ব্যাংক। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে কিভাবে ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয় বা তফসিলী ব্যাংক হয়, কোন গুলো তফসিলী ব্যাংক ইত্যাদি। তাই চলুন কিভাবে ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয় বা তফসিলী হয় তা জেনে নেবার চেষ্টা করি।
কিভাবে ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয় বা তফসিলী ব্যাংক হয় তা জেনে নেবার আগে জানতে হবে তফসিলী ব্যাংক কি। একই সাথে জেনে নেয়া দরকার বাংলাদেশে তফসিলী ব্যাংক কোনগুলো!
তালিকাভুক্ত ব্যাংক বা তফসিলী ব্যাংক
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।
তবে যে সকল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট তালিকায় তালিকাভুক্ত হলে তাকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলা হয়।
বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ব্যাংক
বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত হওয়া ব্যাংক মোট ৬১টি। যার মধ্যে-
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬টি।
এগুলো হল: সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড।
বাকি তালিকাভুক্ত ব্যাংক সমূহ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
তালিকাভুক্ত ব্যাংক এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য
প্রথমত, নিজস্ব স্বত্তা বিশিষ্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সদস্য হতে হবে।
তৃতীয়ত, ব্যাংকের অভ্যন্তরীন পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে।
চতুর্থত, ব্যাংককে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় শর্তের অধীনে পরিচালিত হতে হবে।
পঞ্চমত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল ধরণের আদেশ-নির্দেশ নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।
ষষ্ঠত, দেশের মুদ্রাবাজারের সদস্য হতে হবে।
ব্যাংক তালিকাভুক্ত করণে প্রয়োজনীয় শর্তাবলী
১। আইনানুগ সংগঠন হতে হবেঃ ব্যাংকিং কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৯৬২ ৫(গ) ধারা অনুযায়ী প্রচলিত আইনের অধীনে নিবন্ধিত একটি ব্যাংক কোম্পানী হতে হবে।
২। ব্যাংক মূলধন থাকতে হবে ও সংরক্ষিত তহবিল থাকতে হবেঃ ১৯৬২ সালের কোম্পানি আইনের ধারা অনুসারে মূলধন ও সংরক্ষিত তহবিল এর পরিমাণ হতে হবে ৪০০ কোটি।
৩। নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়ঃ তফসিলভুক্ত ব্যাংক সমূহকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে তাদের আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ জমা রাখতে হয়।
এ অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখতে হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে এই জমার হার মোট আমানতের ৫.৫০ শতাংশ।
৪। তরল সম্পদের সংরক্ষণ করতে হবেঃ গ্রাহকের দাবী ও অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য প্রত্যেক তফসিলী ব্যাংক কে লিকুইড এসেট সংরক্ষণ করতে হয়।
লিকুইড এসেট মানে হচ্ছে তরল সম্পদ বা নগদ অর্থও বলা যেতে পারে।
বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এটা বিভিন্ন রকম।
বাংলাদেশে বর্তমানে এর পরিমাণ ১৮.৫০ শতাংশ।
৫। আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করতে হবেঃ প্রতিটি তফসিলী ব্যাংককে নির্দিষ্ট সময় পর পর তাদের নিজস্ব আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।
তফসিলভুক্ত বা তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া
উপরোক্ত শর্তসমূহ পূরণ করার পর কেন্দ্রিয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিকট আবেদন করতে হয়।
আবেদন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু গাইডলাইন রয়েছে।
সে অনুসারে আবেদন করতে হয়।
এসকল আবেদন করার সময় অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ উপদেষ্টার সহায়তা নিতে হয়।
সেই সাথে একজন আইনজীবীর সহায়তা নিলে ভাল হয়।
আবেদন করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সকল তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করবে।
এরপর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হয় তাহলে সেই ব্যাংক তালিকাভুক্তি পাবে।