কিভাবে জাল দলিল চিনতে পারব
জমি-জমা সমস্যা আমাদের দেশে অনেক গুলো সাধারণ সমস্যার একটি। কি নিজেদের জন্য, কিংবা প্রফেশনাল প্রয়োজনে সব ক্ষেত্রেই এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। জমি-জমা নিয়ে হওয়া ঝামেলা কম নয়। তেমনি এসব নিয়ে প্রতারণার সংখ্যাও খুব কম নয়। কিভাবে জাল দলিল চিনতে পারব সে নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আজ আমরা কিভাবে জাল দলিল চিনতে পারব সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
আমরা জাল দলিল চিনতে পারব যদি আমরা তাড়াহুড়ো না করি। দলিল নিরীক্ষণের বেলায় খুব সতর্ক থাকতে হবে।

How to know fake land deed
জাল দলিল কি?
ভুল বা অনৈতিক উদ্দেশ্যে জমি সংক্রান্ত ভুয়া কাগজ বা দলিল তৈরি করা হলে তাকেই জাল দলিল বলে।
সাধারণত অপরের সম্পত্তি অবৈধভাবে নিজের দখলে নিতে বা অবৈধভাবে অন্যের কাছে হস্তান্তর করতে ভুল বা ভূয়া কিছু কাগজপত্রের সাহায্যে সম্পূর্ণ ভূল দলিল তৈরি করা হয়।
আর একেই জাল দলিল বলা হয়।

How to recognize fake land deed
কিভাবে জাল দলিল চিনতে পারব?
বালাম বহি বা ভলিউমের তথ্য যাচাইকরণ
দলিল সাধারণত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নির্দিষ্ট ভলিউমে লিপিবদ্ধ থাকে যাকে বালাম বহি বলা হয়।
কোন দলিল অবশ্যই বালামবহি সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।
রেজিস্ট্রিতে না পাওয়া গেলে সেখানে রাখা মূল দলিলের সাথেও মিলিয়ে দেখতে হয়।
বালাম বহিতে মেলানোর জন্য অবশ্যই আবেদন করতে হয় ও নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
স্বাক্ষর যাচাইকরণ করে নিন
অবশ্যই স্বাক্ষর যাচাই করে নিতে হবে। তাই এটি যাচাই করার জন্য স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া ভাল।
আবার ভূমি অফিসের সিল, দলিলের পিছনে মালিকের আঙুলের ছাপ যাচাই করতে হবে।
কোন কারণে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সিল নতুন দেখলেই তা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।
নামজারি যাচাই করণ করতে হবে
উল্লেখিত জমির নামজারি যাচাই করতে হবে। দেখতে হবে নামজারির ধারাবাহিকতা সুচারুরূপে খোজ নিতে হবে।
বিশেষ করে জরিপ খতিয়ানে একাধিক বিক্রয় বিবরণীতে থাকা জমির পরিমাণ মিলিয়ে দেখতে হবে।
একই সাথে প্রতি দলিলে দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর সব ভালভাবে যাচাই করতে হবে।
সরেজমিনে মূল মালিক শনাক্ত
দলিলে একাধিক মালিকের উপস্থিতি দলিলের জাল সম্পর্কে সন্দেহ বাড়ায়।
সরেজমিনে গিয়ে তাই মূল মালিকের শনাক্ত করণ জরুরি।
একই সাথে সকল মালিক জমিটি বিক্রয় করতে বা বন্ধক দিতে রাজি আছে কি না তা সরেজমিনে জেনে নিতে হবে।
মাঠপর্চা যাচাই করণ
উপজেলা সেটেলমেন্ট এ গিয়ে আবেদন করে, নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে মাঠ পর্চা নিতে হবে ও তা যাচাই করতে হবে।
মাঠপর্চা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে না থাকলে তা অবশ্যই জাল বলে গণ্য।
দলিল হেবা বা দানপত্র হলে কি করবেন
নির্দিষ্ট কিছু সম্পর্ক ছাড়া হেবা বা দানপত্র হয়না । তাই এসব দলিল যাচাই করার সময় সম্পর্ক যাচাই করুন।
নির্দিষ্ট সম্পর্ক সমূহ: স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, আপন ভাই-বোন, নানা-নানী, নাতি-নাতনী, দাদা-দাদী ও নাতি-নাতনীর ইত্যাদি।
আম-মোক্তারনামা দলিল যাচাই করণ
যদি সম্প্রতি আম-মোক্তার নামা দলিল থাকে তবে তাতে উভয় পক্ষের ছবি যাচাই করতে হবে।
যদি ছবি না থাকে বা মিল না থাকে তাহলে তা জাল দলিল।
তারিখ, লেখক ও সিল-স্ট্যাম্প যাচাইকরণ
দান করা দলিলের তারিখ যাচাই করতে হবে। রেজিস্ট্রি কখন করা হয়েছে বা দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক যাচাই করতে হবে।
দলিল সম্পাদনের তারিখ ও দখলের তারিখও যাচাই করতে হবে।
দলিল যিনি লিখেছেন তার সাথে কথা বলে নিন।
দলিলে ব্যবহৃত সিল, স্ট্যাম্প েইত্যাদি যাচাই করে নিন।
অনেক সময় স্ট্যাম্পও জাল হয়, তাই স্ট্যাম্পও যাচাই করে নিতে পারলে ভাল।
তাছাড়া কোন ভেন্ডার থেকে কেনা হয়েছে, কার নামে কেনা হয়েছে তা যাচাই করতে হবে।
ঘষামাজা দলিল প্রত্যাহার করুন
দলিলে ওভাররাইটিং বা ঘষামাজা কিংবা ফ্লুইড ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।
তাই এরূপ কোন কিছু দলিলে থাকলে তা অবশ্যই প্রত্যাহার করুন।
মৃত ব্যক্তির নামে জমির রেজিস্ট্রি
অবশ্যই মনে রাখবেন জমি রেজিস্ট্রি দিচ্ছেন তিনি জীবিত কি না তা জেনে নিন। অনেক সময় এর মাধ্যমেও দলিল জাল করা হয়।
ধন্যবাদ informative info শেয়ার করার জন্য ।