ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো রাখা এবং ব্যাকআপ বেশি পাওয়ার কৌশল

আমাদের জীবনে প্রযুক্তির অবদান কতটুকু তা আমরা সবাই জানি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই নির্মিত হয়েছে স্মার্টফোন, কম্পিউটার , ল্যাপটপসহ নানা ধরনের ডিভাইস। 


বর্তমানে অফিসের কোনো দরকারি কাজ বা স্কুল-কলেজের প্রজেক্ট সব ক্ষেত্রেই কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রয়োজন পড়ে‌। 

এজন্য আমাদের এই ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হয় দীর্ঘসময়। এ কারণে ল্যাপটপগুলোতে স্মার্টফোনের তুলনায় বেশি ব্যাটারী ব্যাকআপ দেয়া হয় যাতে তা অনায়াসেই দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করা যায়। 

বিভিন্য ধরনের ব্যাটারি

তবে আপনি একটি নতুন ল্যাপটপ কেনার পর তার ব্যাটারি লাইফ ভালো পেলেও কিছুদিন ব্যবহারের পর তা আর আগের মতো ভালো পারফরমেন্স দেয় না। এজন্য আমাদের জানতে হবে কি করলে আমরা আমাদের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো রাখতে পারি।

এ সম্পর্কেই ছোট-খাটো কিছু টিপস জানাবো আজকের এই আর্টিকেলটি তে। 

খুব সহজ কয়েকটি স্টেপ ফলো করলেই আপনি আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ভালো রাখতে ও ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। 

১. স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে ব্যবহার করুন

ব্যাটারি চালিত যেসব ডিভাইস রয়েছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট,ল্যাপটপ ইত্যাদির ব্যাটারির চার্জের একটি বড় অংশ ব্যায় হয় স্ক্রিনেই। এজন্য স্ক্রিনের ব্রাইটনেস যথাসম্ভব কমিয়ে ব্যবহার করতে হবে। 

যদি তা ৫০% হয় তবে ব্যাটারি লাইফ ভালো থাকে । আর যদি ২০-২৫% এ রাখা হয় তবে তা আরো ভালো। 

২. ব্যাটারি সেভিং মোড অন রাখুন

ল্যাপটপের চার্জ ধরে রাখার জন্য এই পদ্ধতিটি অনেক ভালো। যেকোনো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপেই এই অপশন অন করার প্রক্রিয়া দেয়া আছে। শুধু নিয়মটা জানতে পারলেই হবে।

এই মোড অন করার মাধ্যমে আপনি কোনো দরকারি কাজ ঝামালাহীনভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন।

ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখুন

ল্যাপটপ ব্যাটারি ভালো রাখুন

৩. অপ্রয়োজনীয় ফিচারসমূহ বন্ধ রাখুন 

ল্যাপটপে অনেক কিছুই সবসময় দরকার হয় না। 

যেমন – ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, গ্রাফিক্স কার্ড ইত্যাদি। এসব যখন আপনার দরকার হবে না সেগুলো বন্ধ করে দিন।

 কারণ এসব অন থাকলে ল্যাপটপে আলাদা একটি চাপ সৃষ্টি হয় যা আপনার অন্যান্য কাজগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। 

আপনার গ্রাফিক্স কার্ড যখন দরকার হবে না তখন সাময়িকভাবে এর জিপিইউ ডিজেবল করে রাখতে পারেন। এতে ব্যাটারি লাইফ ভালো থাকবে। 

৪. এসএসডি স্টোরেজ ব্যবহার করুন

সাধারনত হার্ড ডিস্কের চেয়ে এসএসডি স্টোরেজের কার্যক্ষমতা বেশি ও এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করে থাকে। 

তাই ল্যাপটপের হার্ড ডিস্ক বদলে এসএসডি লাগিয়ে নিয়ে আপনি আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধি করতে পারবেন।

৫. অপ্রয়োজনীয় এপ্লিকেশন বন্ধ রাখুন

আমরা অনেক সময় কাজে না লাগলেও বিভিন্ন এপ চালু করে রাখি। 

বিভিন্ন ধরনের লেখার সফটওয়্যার, ব্রাউজার উইন্ডো , মিডিয়া প্লেয়ার , স্ক্রিনশট এপ , ফটোশপ প্রভৃতি এপ আপনার ল্যাপটপের RAM দখল করার পাশাপাশি ব্যাটারিও খরচ করে। 

তাই ব্যাটারি চার্জ বাঁচাতে হলে যখন এগুলো দরকার পড়বে না তখন এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। 

৬. ল্যাপটপ বন্ধ করে রাখুন

যখন আপনার ল্যাপটপ দরকার হবে না তখন ল্যাপটপ বন্ধ করে রাখাই ভালো। 

কারণ অনেক দীর্ঘসময় ল্যাপটপ চালু থাকলে এটি ব্যাটারিসহ হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ ও কুলিং ফ্যানের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। 

৭. চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না

অনেকের মধ্যে এই অভ্যাসটি রয়েছে যারা চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকেন । কিন্তু এটি করা মোটেও ঠিক নয়। 

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে ল্যাপটপ সবসময় চার্জে লাগিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এর মাধ্যমে ল্যাপটপের ব্যাটারি ধীরে ধীরে তার কার্যক্ষমতা হারায়।

তাই ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো রাখতে আজই এই অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

৮. ল্যাপটপ চার্জার সাবধানে আন-প্লাগ করুন

আমরা ল্যাপটপের চার্জের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেই না । তাড়াহুড়ো করে চার্জে লাগিয়ে রেখে দেই। আবার হুট করে আন-প্লাগ করে চালানো শুরু করে দেই। 

কিন্তু এমনটা করা কিন্তু একদমই ঠিক না। তাড়াহুড়ো করে চার্জার লাগালে প্লাগইন এ সমস্যা দেখা দিতে পারে ও চার্জিং এর ক্ষতি হতে পারে। তাই চার্জে লাগানোর সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। 

৯. কুলার ফ্যান ব্যবহার করতে হবে

আপনি যখন ল্যাপটপ চার্জ করবেন তখন দেখতে হবে যে এটি বেশি পরিমাণে গরম হয়ে যাচ্ছে কি না । যদি গরম হয় তবে আপনি একটি কুলার ফ্যান নিয়ে নিতে পারেন। 

এতে করে আপনার ল্যাপটপ অনেকটা গরম হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। 

কূলিং ফ্যান ব্যবহারে ল্যাপটপ ঠান্ডা থাকে যার ফলে আপনি আপনার ল্যাপটপ থেকে ভালো পারফরমেন্স পাবেন ও ব্যাটারিও ভালো থাকবে। 

১০. বিদ্যুৎ সংযোগ সাবধানে অন-অফ করতে হবে

ল্যাপটপ চালু অবস্থায় কখনোই ল্যাপটপে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবেন না। এতে ল্যাপটপের অনেক ক্ষতি হতে পারে। 

এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকা অবস্থায় চার্জার ল্যাপটপে প্লাগইন করবেন না। আবার হঠাৎ আন-প্লাগও করবেন না। 

বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে এ কাজগুলো করবেন। নাহলে ল্যাপটপে বড় ধরনের ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। 

১১. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন

ল্যাপটপকে হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রা হতে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে নিয়ে যাবেন না। 

আবার ল্যাপটপ এমন স্থানে রাখবেন না যেখানে তাপমাত্রা উঠানামা করে।

সূর্যের তাপে ল্যাপটপ চালানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। এতে আপনার ল্যাপটপের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে তা ব্যাটারিসহ অন্যান্য পার্টসগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। 

তাই ল্যাপটপ সবসময় এমন স্থানে রাখবেন যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে ও খুব বেশি গরম নয়। 

১২. ওভারচার্জ করা থেকে বিরত থাকুন

আমরা অনেকেই এই ভুলটি করে থাকি। ল্যাপটপের চার্জ ১০০% হওয়ার পরও আমরা চার্জারের প্লাগ খুলি না এবং এ অবস্থাতেই ল্যাপটপ চালানো শুরু করে দেই । 

যা একটি মারাত্মক ভুল। এটি আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ নষ্ট হওয়ার একটি বড় কারণ। 

এজন্য কোনোভাবেই ল্যাপটপকে ওভারচার্জ করা যাবে না। ফুল চার্জ হয়ে গেলে চার্জার আন-প্লাগ করুন ও চার্জ ৪০% এর কম হয়ে গেলে চার্জে দিন। 

১৩. একটানা দীর্ঘসময় ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন

ল্যাপটপ ৪৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে চালিয়ে রাখা ঠিক নয়। এতে করে ব্যাটারির ক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে। 

তবে যদি দীর্ঘসময় ল্যাপটপ চালানোর প্রয়োজন পড়ে‌ তবে একটি ভালো এক্সটার্নাল কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা উচিত। 

১৪. ফ্ল্যাট সার্ফেসে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন 

আমরা অনেকেই বিছানায় বা কোলে নিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকি। এটা কিন্তু ঠিক নয়। 

এর ফলে ল্যাপটপের ব্যাটারি আয়ু ও হার্ডওয়্যার আয়ু অনেকটা কমে যায়। 

ল্যাপটপ নরম জায়গায় রাখলে এতে ঠিকমতো বাতাস চলাচল করতে পারে না। এর কারণে এর ভিতরে থাকা কুলিং ফ্যানগুলো ঠিকমতো হার্ডওয়্যারকে ঠান্ডা করতে পারে না। 

এতে ল্যাপটপ গরম হতে থাকে ও এর প্রসেসর ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যায়। যা ভালো পারফরমেন্স দিতে পারে না।

এজন্য ল্যাপটপকে সবসময় ফ্ল্যাট ও শক্ত সার্ফেসে রেখে ব্যবহার করতে হবে। এতে ল্যাপটপে পর্যাপ্ত বায়ু সঞ্চালন হয় ও ভালো কাজ করতে পারে। 

বাজারে ল্যাপটপের জন্য অনেক ডেডিকেটেড স্ট্যান্ড পাওয়া যায় । এগুলো কিনে নিতে পারেন। 

১৫. ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ সম্পন্ন ল্যাপটপ কিনুন 

ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়ার যতো ট্রিকস অনুসরণ করেন না কেন আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারির যদি ধারনক্ষমতা কম থাকে তবে তার কাছ থেকে ভালো ব্যাকআপ পাওয়ার আশা করে কোনো লাভ নেই। 

তাই আপনার বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ দরকার হলে বাজেট বাড়িয়ে এমন ল্যাপটপ কিনুন যাতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ল্যাপটপ কেনার সময় এ বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন ।

সবশেষে বলা যায়, 

ভালো ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে হলে এই ট্রিকসগুলো অবশ্যই ফলো করার চেষ্টা করুন। আশা করি ভালো ফল পাবেন।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!