আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আম গাছ সারা বাংলাদেশেই রয়েছে তবে ভৌগলিক ভাবে আম গাছের জন্য উপযুক্ত জেলা গুলো হল রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা। এসকল জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। তবে বিভিন্ন কারণে আমের ফলণ কম হতে পারে। আমের ফলন কম হওয়ার যে সকল কারণ দায়ী, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তাদের মধ্যে অন্যতম।
১। আমের শোষক পোকা: এ পোকা নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় আমগাছের সকল কচি অংশ থেকে রস চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। নিম্ফ গুলি আমের মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ২০-১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া হপার আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
২। ফল ছিদ্রকারী পোকা: এ পোকার পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার উপর ডিম পাড়ে। কয়েকদিনের মধ্যেই ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়া খুব ছোট বিন্দুর মত আম ছিদ্র করে আমের ভিতর ঢুকে পড়ে এবং আমের শাঁস খেতে থাকে। পরে আটি পর্যন্ত আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানটি কাল হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর আক্রমণের ফলে পচন ধরে যায়। বেশী আক্রান্ত আম ফেটে যায় এবং গাছ থেকে পড়ে যায়।
৩। মাছি পোকা: স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ক ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা বুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতরে সাদা রং এর কীড়া দেখা যায়। বেশী আক্রান্ত আম অনেক সময় পঁচে যায়। সাধারণতঃ এ পোকা আমের উপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে।
৪। কান্ডের মাজরা পোকা: এ পোকা আম গাছের কান্ড ও শাখাকে আক্রমণ করে। আক্রমণ স্থান দিয়ে পোকার মল নির্গত হয়। ছোট গাছ আক্রান্ত হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রান্ত শাখাগুলি সহজেই ভেঙ্গে যায়।
৫। পাতা কাটা উইভিল: এ পোকা আম গাছের শুধু কচি পাতা কেটে ক্ষতি করে। কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্যশিরার উভয় পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে এবং পরে পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেটে দেয়। ভালো করে দেখলে কাঁচি দ্বারা কেউ কেটেছে বলে মনে হয়। এ পোকার আক্রমণে গাছের নতুন পাতা ধবংস হয়। বেশী আক্রমণে একটি ছোট গাছ পাতাশূন্য হতে পারে।
৬। এপসিলা পোকা: কচি পাতায় পাড়া ডিমের ভিতর ভ্রুণাবস্থায় থাকা প্রথম ধাপের নিম্ফ পাতার ভিতর থেকে রস চুসে খায় এবং এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে যার কারণে পত্রকক্ষে সুচালো মুখবিশিষ্ট সবুজ রংয়ের মোচাকৃতি গলের সৃষ্টি হয়। এই গল সৃষ্টি হওয়ার কারণে পত্রকক্ষে আর কোন নতুন পাতা বা মুকুল বের হতে পারে না। গাছে বেশী পরিমানে গল সৃষ্টি হলে গলযুক্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও সেই সাথে আমের ফলন কমে যায়।
1 Answers
Your Answer