হামিং বার্ড
বিশ্ববিখ্যাত নাবিক কলম্বাস যখন জাহাজে চড়ে উপকুলবর্তী দ্বীপে পৌঁছান তখন সে দেশে ছোট্ট এক ধরনের পাখি দেখতে পান। ফুলের সামনে ঘুরে বেড়ানো এ পাখি দেখে অনেকেই একে অজানা পোকা মনে করেন। এরপর সারা বিশ্বে হামিং বার্ড নামে ছোট্ট পাখিটির বিষয়ে জানতে খুব বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি।
এই পাখিটির অগ্রভাগ থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার এব সর্বোচ্চ ওজন ১.৬ গ্রাম থেকে ২.০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এটিই একমাত্র পাখি যেটি পিছন দিকে উড়তে পারে।
হামিং বার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এ পাখি দেখা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট হামিং বার্ড পাওয়া যায় কিউবায়। এদের ওজন হয় মাত্র ২ গ্রাম। এদের ডিমের আকৃতি মটর দানার মত। হামিং বার্ডের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ফুলের মধু। এরা সাধারণত ফুলের সামনে হাওয়ায় ভেসে থেকে মধু সেবন করে। তবে মাঝে মধ্যে ছোট পোকামাকড়ও খায়। হামিং বার্ডের খাওয়ার অভিজ্ঞতা একটু অন্যরকম। সারাদিনে এরা নিজেদের শরীরের ওজনের পরিমাণ মত খাবার সেবন করতে পারে।
সম্প্রতি পেরুর এক গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে যে, হামিং বার্ড নাকও ডাকতে পারে। হামিং বার্ডের যতটুকু ওজন তার শতকরা ৪.২ শতাংশ হচ্ছে তাদের মস্তিষ্কের ওজন। সাধারণত পাখিদের মধ্যে এত বড় মস্তিষ্কের পাখি অন্য কোন পাখির মধ্যে দেখা যায় না।
এদের মস্তিষ্ক এতটাই পরিষ্কার যে, এরা কোন ফুল থেকে আগে মধু খেয়েছে সে স্পষ্ট স্মরণে রাখতে পারে। এমনকি সেই ফুলে পরবর্তীতে কখন মধু আসবে এরা এটাও বলে দিতে পারে। এই পাখির শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। আয়তনের দিক থেকে এ পাখিকে অনেকখানি মৌমাছির মত মনে হয়।
হামিং বার্ড প্রজারিত সবচেয়ে বড় পাখির নাম জায়ান্ট হামিং বার্ড। এরা লম্বায় ৮.৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ গ্রাম। এই ওজনের শতকরা ৩০ শতাংশই হল পেশী যা উড়তে সহায়তা করে। এদের খাদ্য তালিকায় প্রধান হলো মধু।
তবে মধু খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখে এবং ভাসমান অবস্থায় ফুল থেকে মধু আহরণ করে থাকে। আমেরিকার জার্নাল অফ সাইন্স কর্তৃক প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, পাখি বিশেষজ্ঞরা এ পর্যন্ত ৩০০ প্রজাতির হামিং বার্ড এর সন্ধান পেয়েছেন।
এমন ছোট্ট একটি পাখি সম্বন্ধে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার রকেটের উড়ে চলা আর হামিং বার্ডের উড়ে চলা প্রায় সমান সমান। এর কারণ হলো, রকেট যেমন নিচ থেকে সোজা হয়ে উপরে ওঠার ক্ষমতা রাখে ঠিক হামিং বার্ডও Specific Gravity বাড়িয়ে ভূমি থেকে সোজা উপরে উড্ডয়ন করতে পারে এবং উপর থেকে সোজা নিচে নামতেও পারে।
এই পাখির আর দুইটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এরা অনেকদিন পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে এবং কোন প্রকার বিশ্রাম ছাড়াই প্রায় ১ হাজার মাইল পর্যন্ত উড্ডয়ন করতে পারে।
একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সেকেন্ডে এরা সর্বনিম্ন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ বার পর্যন্ত ডানা ঝাপটাতে পারে যেটি অন্য পাখিদের ক্ষেত্রে একেবারেই অসম্ভব। হামিং বার্ডের গড় আয়ু ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হলেও কিছু কিছু হামিং বার্ড আছে যেগুলো ১ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে।