মানুষের চোখের দর্শন প্রক্রিয়া কী? আমরা কী কাছের ও দূরের বস্তু একই প্রক্রিয়ায় দেখি? নাকি ভিন্ন প্রক্রিয়ায়? চোখের অভিযোজন ক্ষমতা কী?
মানবদেহের যেসকল অঙ্গের মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রকৃতি ও পরিবর্তন অনুধাবন করতে সক্ষম তাকে সংবেদী অঙ্গ বলে। চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবেদী অঙ্গ।
চোখের দর্শন প্রক্রিয়া:
দর্শনীয় বস্তু হতে আগত আলােক রশ্মি ক্রমান্বয়ে কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, পিউপিল, লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমার এর মধ্য দিয়ে রেটিনায় পতিত হয়। আপতিত আলােক রশ্মি লেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিসৃত হয়ে রেটিনার ফোবিয়া সেন্ট্রালিসের উপর একগুচ্ছ অভিসারী রশ্মিরূপে প্রতিফলিত হয়। ফলে রেটিনার উপর বস্তুটির ছােট ও উল্টা প্রতিবিম্ব তৈরি হয়।
রেটিনায় বিদ্যমান আলােক সংবেদী রড ও কোণ কোষগুলাে উদ্দীপ্ত হয়ে অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে এ আলােক অনুভূতি মস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে পৌছায়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় উল্টা প্রতিবিম্ব সােজা হয়ে যায়। ফলে আমরা বস্তুটিকে সােজা দেখতে পাই।
চোখের উপযোজন ক্ষমতার প্রক্রিয়া:
দর্শনীয় বস্তু ও চোখের মধ্যকার দূরত্বের পরিবর্তন না করে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব স্বাভাবিকভাবে রেটিনায় প্রতিফলিত হয়। কিন্তু এ দূরত্বের কম বা বেশি হলে প্রতিবিম্ব রেটিনায় ফোকাসের জন্য উপযােজন প্রয়ােজন।
চোখের আইরিশ, সিলিয়ারি পেশি, সাসপেনসরি লিগামেন্ট ও লেন্স সক্রিয়ভাবে উপযােজনে অংশ নেয়। কাছের ও দূরের বস্তু দেখার জন্য দু’ভাবে উপযােজন সংঘটিত হয়।
১) কাছের বস্তু দেখার প্রক্রিয়া:
চোখের কাছের কোন বস্তুকে দেখার সময় সিলিয়ারি বডিতে বিদ্যমান বৃত্তাকার পেশি প্রসারিত হয় এবং সাসপেনসরি লিগামেন্ট সংকুচিত হয়। ফলে লেন্সের বক্রতা কমে গিয়ে তা সরু ও লম্বা হয় এবং ফোকাস দূরত্ব বেড়ে যায়। এভাবে দূরের বস্তু থেকে আগত আলােক রশ্মি রেটিনায় পতিত হয়ে বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
২) দূরের বস্তু দেখার প্রক্রিয়া:
দূরে অবস্থিত কোন বস্তুকে দেখার সময় সিলিয়ারি বডিতে বিদ্যমান বৃত্তাকার পেশি প্রসারিত হয় এবং সাসপেনসরি লিগামেন্ট সংকুচিত হয়। ফলে লেন্সের বক্রতা কমে গিয়ে তা সরু ও লম্বা হয় এবং ফোকাস দূরত্ব বেড়ে যায়। এভাবে দূরের বস্তু থেকে আগত আলােক রশ্মি রেটিনায় পতিত হয়ে বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। দ্বিনেত্র দৃষ্টি বা স্টেরিওস্কোপিক দৃষ্টি ও মানুষ দ্বিনেত্র দৃষ্টিসম্পন্ন প্রাণী।
অর্থাৎ মানুষ দু’চোখের সাহায্যে একইসাথে কোন বস্তুকে এককভাবে দেখতে পায়। এ ধরনের দর্শনকে স্টেরিওস্কোপিক দৃষ্টি বলা হয়।
কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলােক রশ্মি রেটিনায় পড়লে যে স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে একটি মাত্র প্রতিবিম্বে একীভূত হয়, আমরা তখন দুচোখের সাহায্যে একটি বস্তুকে এককভাবে দেখি। মানুষের চোখ দুটো ৬.৩ সেমি দূরত্বে অবস্থিত, ফলে কোন বস্তু দেখার সময় প্রতিটি চোখ বস্তুর একটি করে প্রতিবিম্ব তৈরি করে।
প্রতিবিম্ব দুটির একটি অন্যটি থেকে কিছুটা আলাদা, উভয় উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। মস্তিষ্ক দুটি উদ্দীপনাকে সমন্বয় সাধন করে ফলে বস্তুর একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র দেখা যায়।