মোবাইল ফোনে ছবি তোলার সময় কি কি বিষয় খেয়াল রাখবেন

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির এই অভাবনীয় অগ্রগতির কারনে ছবি তোলার একটি মাধ্যম ক্যামেরা কমবেশি সকলের কাছেই পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন মেগা পিক্সজেলের স্মার্ট ফোন ক্যামেরা গুলো এখন প্রায় সকলের হাতে হাতে। আর তাই যখন তখন আমরা আমাদের মুহূর্ত গুলোকে ধরে রাখছি ক্যামেরা বন্দি করার মাধ্যমে। কিন্তু কথা হল, শুধু কি ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি তুললেই কি ছবির মান ভালো হবে ? সত্যি বলতে যদি ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি তুললেই ছবিটি মান ভালো হত, তাহলে সকলেই ফটোগ্রাফার হয়ে যেতো। তাই বলে কি ফটোগ্রাফার হওয়াটা অসম্ভব বেপার, আসলে অসম্ভব বলে কিছু নেই কিন্তু ভালো মানের ছবি ধরে রাখার জন্য কিছু কৌশল প্রয়োজন। যদি আপনি ছবি ক্যাপচার করার সময় এই কৌশল গুলো মেনে চলেন তাহলে আপনার দ্বারাও সম্ভব কিছু সাধারণ বিষয়কে অসাধারন ভাবে তুলে ধরা এই ছবির মাধ্যমে। আর দেরি না করে চলুন তাহলে জেনে নেয়া জাক মোবাইল ফোনে ছবি তোলার সময় কি কি বিষয় খেয়াল রাখবেন।


 

care of your mobile photography

 

আমরা আপনাদের মোবাইল ফোনে ছবি তোলার কিছু কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেবো, যাতে করে আপনি জানতে পারেন কি করলে ক্যাপচার করা ছবির মান ভালো হয়। নিচে পর্যায়ক্রমে কৌশল গুলো আলোচনা করা হলঃ

 

ফটোগ্রাফির কিছু বেসিক কৌশল

ফটগ্রাফির কিছু বেসিক নিয়ম কানুন রয়েছে, আপনি ইন্টারনেট ঘাটলেই বিষয়গুলো বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। যেমন ধরুন, সূর্যের সাত নিয়ম, রুল অফ থার্ড – ইত্যাদি। এগুলো জেনে নেয়ার মাধ্যমে আপনি সহজেই ভালো ফ্রেম নির্ধারন করতে পারবেন এবং ছবি তোলার পর অন্তত আগের কম্পোজিশন গুলোর ভিন্নতা আপনি নিজেই ধরতে পারবেন। এই বেসিক নিয়ম গুলো আপনার ফটোগ্রাফির বেস শক্ত করে নিতে (ভিত্তি) পারবেন এবং এই নিয়ম গুলো মেনে ছবি তুললে অতি সাধারণ একটি ছবিকেও অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবেন।

 

ছবি তুলতে আলোর গুরুত্ব

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় এখনো একটি সীমাবদ্ধতা রয়েই গিয়েছে। বেশির ভাগ মোবাইলের ক্যামেরাই লো-লাইটে ভালো ছবি তুলতে সক্ষম নয়। তাই ছবি তোলার ক্ষেত্রে প্রথমে এমন একটি দিক নির্বাচন করুন যেন সেই দিকের বিপরীতে অবজেক্টকে রাখলে অন্তত ক্যামেরা প্রয়োজনীয় আলো পেতে পারে। স্থির সাবজেক্টের ক্ষেত্রে আপনি আপনার অবস্থান পরিবর্তন করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ‘সিল্যুয়েট’ ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে এই দিক নির্দেশনা বিপরীত হবে।

 

লেন্স পরিষ্কার করতে ভুলবেন না

মোবাইল ব্যবহার করতে করতে এক সময় দেখা যায় মোবাইলের বডিতে স্ক্র্যাচ (দাগ) পড়েছে। এবং ক্যামেরা পিছনে থাকায় ক্যামেরার উপরের নিরাপত্তা স্তরেও দাগের কারণে ছবি ঝাপসা আসতে পারে। এর জন্য হয় এমন কিছু ব্যবহার করুন যা আপনার মোবাইলটির ক্যামেরা প্রোটেক্ট করতে পারে। এবং যদি দাগ পড়েই যায় তবে আপনি ছবি তোলার সময় ব্যাক কভার (সব মডেল আবার এক নয়) খুলে ছবি তুলতে পারেন। আর, মোবাইলের ক্যামেরার লেন্সের উপর মাঝে মাঝে ধুলোবালি বা জলীয় বাষ্প জমে যেতে পারে,তাই মাঝে মধ্যেই লেন্স পরিষ্কার করুন।

 

ডিজিটাল জুম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন

নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন আপনার মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার সময় জুম করে ছবি তুললে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছবির মান যাচ্ছেতাই হয়। কেননা, মোবাইলের ক্যামেরা গুলোতে ডিজিটাল জুম ব্যবহার করা হয়ে থাকে ফলে জুম ব্যবহার করলে ছবি ফাটা ফাটা আসে এবং ছবিতে প্রচুর পরিমানে আইএসও দেখা যায়। তাই, চেষ্টা করবেন জুম না করে ছবি তোলার। দরকার হলে যতটা সম্ভব সাবজেক্টের কাছে গিয়ে ছবি তুলে দেখতে পারেন।

 

ফ্ল্যাশ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানুন

এখন প্রায় মোবাইলের ক্যামেরা ইউনিটেই এলইডি ফ্ল্যাশ থাকে। ফ্ল্যাশে ব্যবহারে আপনার সতর্ক থাকা উচিৎ। কেননা, অটো ফ্ল্যাশ নামে যে অপশনটি ক্যামেরা অ্যাপে ইন্টিগ্রেট করা থাকে তা মাঝে মধ্যেই সঠিক ভাবে কাজ করেনা। দেখা গেল, আপনি ছবি তুলছেন দিনের আলোয় যেখানে পর্যাপ্ত আলো রয়েছে। কিন্তু আপনার মোবাইলের ফ্ল্যাশটা তবুও জ্বলে উঠে আপনার ছবিতে ১২টা বাজিয়ে দিল। আবার ধরুন, অন্ধকারে যখন আপনার ফ্ল্যাশ দরকার তখন হঠাত করে ফ্ল্যাশের অটো মোড কাজ করলো না। তাই, ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে চাইলে আপনার প্রয়োজন বুঝে হয় ফ্ল্যশ অন অথবা ফ্ল্যাশ অফ মোডে ব্যবহার করা উচিৎ। আর আপনার যদি ফ্ল্যাশের আলোটা কিছুটা রাফ মনে হয় বা নির্দিষ্ট একটি মুহুর্তের জন্য অতিরিক্ত মনে হয় তবে আপনি ফ্ল্যাশের সামনে একটি সাদা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে পারেন, ভালো ফল পাবেন। বিশেষত দিনের পর্যাপ্ত আলোতে ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করাই উত্তম।

 

ছবি তুলতে রেজুলেসনের গুরুত্ব ও ব্যবহার জানুন

আপনি আপনার ক্যামেরা অ্যাপের অপশনে গিয়ে বিভিন্ন রকম অপশন দেখতে পারবেন, যার মাঝে ছবির কোয়ালিটি এবং রেজ্যুলেশন নির্ধারন করে দেয়া যায়। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ‘যে এখনো কেন রেজ্যুলেশনে ৬৪০x৪৮০ দেয়া থাকে?’ আসলে, আপনিতো আর একই পারপাসে ছবি তুলবেন না। ভিন্ন ভিন্ন কারণে আপনি একেক রেজ্যুলেশন নিয়ে কাজ করতে পারেন। যেমন, আপনি একজনকে একটি ছবি তুলে এমএমএস পাঠাতে চাইছেন। তখন আপনি ছোট রেজ্যুলেশনের ছবি ব্যবহার করতে পারেন। ছোট রেজ্যুলেশনের ছবি গুলোর মান কিন্তু ভালো হয় এবং মেমরীতে সেভও হয় দ্রুত। আবার তাই বলে যেন এমন না হয় যে আপনি সারাদিন ছবি তুলে বাসায় গিয়ে কম্পিউটারে ছবিগুলো ট্রান্সফার করে দেখলেন ছবিগুলো সব ছোট সাইজের – এজন্যেই এই পয়েন্টটি লিখেছি।

 

হাত না কাপিয়ে স্থির ভাবে ছবি তুলুন

আইফোন এবং অনান্য স্মার্টফোনের জন্যেও এখন ট্রাইপড পাওয়া যায় প্রযুক্তি বাজারে। সম্ভব হলে ট্রাইপড ব্যবহার করুন। কেননা, ছবি তোলার সময় যদি আপনার হাত সামান্য কাপে তবে তা আপনার স্মার্টফোনের ছোট পর্দায় না দেখতে পেলেও আপনি যখন কম্পিউটারে দেখবেন তখন আপনার চোখে সেই ত্রুটি ধরা পড়বে। এজন্যে, ট্রাইপড ব্যবহার করুন বা ছবিতোলার সময় যে হাত দিয়ে মোবাইলটি ধরবেন সেই হাতের কনুই পেটের সাথে লাগিয়ে ছবি তুলুন। এতে করে বাড়তি সাপোর্ট পাবেন।

 

ভালো ছবির জন্য জানতে হবে হোয়াইট ব্যাল্যান্সের ব্যবহার

মূলত মোবাইলের ক্যামেরা সমূহ হোয়াইট ব্যালেন্স বেশ ভালো ভাবেই ডিটেক্ট করতে পারে কিন্তু সমস্যা হয় যখন আপনি ছবি তুলতে যাবেন লো-লাইট কন্ডিশনে। তাই, লো-লাইট কন্ডিশনে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্যামেরা অ্যাপ চালু করেই ছবি না তুলে ক্যামেরাকে নির্দিষ্ট সাবজেক্টের উপর ফোকাস করতে যথেষ্ট সময় দিন, ভালো ফল পাবেন। এছাড়াও আপনি ক্যামেরার অপশন থেকে বিভিন্ন রকম হোয়াইট ব্যালান্স সেটিং ব্যবহার করতে পারেন যেমন, ডে-লাইট, ফ্লুরোসেন্ট, ক্লাউডি ইত্যাদি। এগুলোও আপনার ছবিতে ভেরিয়েশন আনতে সাহায্য করবে।

 

এক্সপোসার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন

এক্সপোসার – বিষয়টি যেমন ডিএসএলআরে গুরুত্ব পূর্ন তেমনি মোবাইল ক্যামেরাতেও। মূলত সমগ্র ফটোগ্রাফিক দুনিয়াতেই এর মহত্ব অনেক। এক্সপোসারের ভুল সিলেকশন যেমন চমৎকার পরিবেশের একটি ছবিকেও বিদঘুটে করে তুলতে পারে তেমনি বুঝে শুনে ব্যবহার করলে আপনি সাধারণ মানের একটি বিষয়কেও কিছু ক্ষেত্রে অসাধারণ করে তুলতে পারবেন। আপনি আপনার মোবাইলের ক্যামেরা সেটিংসে গিয়ে দেখবেন এক্সপোসার বৃদ্ধি বা কমানোর সুবিধা আছে। লো-লাইট কন্ডিশনে যদি আপনি এক্সপোসার সামান্য বাড়িয়ে ছবি তুলতে পারেন তবে আপনি বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।

 

ভালো সেলফি তুলবেন কিভাবে

নিজের নিজেই উঠালে সেই ছবিকে বলা হয় সেলফি। আসলে সেলফি তোলার বিশেষ কোন নিয়ম নেই, ছবির মান ভালো করার জন্য উপরের টিপস গুলো ফলো করুন। যেহেতু সেলফি তোলার জন্য নিজেকে সাবজেক্ট হিসেবে নিতে হয় সেহেতু অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত আলোর মধ্যে অবস্থান করতে হবে।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!