প্রাণিভৌগোলিক অঞ্চল কী?
কোন ভৌগলিক অঞ্চলে প্রাণীদের নির্দিষ্ট সন্নিবেশে এমন কিছু প্রজাতি বাস করে যা ঐ অঞ্চলের জন্য একান্ত নিজস্ব তাকে প্রাণীভৌগলিক অঞ্চল বলে।
পাখির বিস্তারের ওপর ভিত্তি করে P.L. Sclater ১৮৫৭ সালে সর্বপ্রথম পৃথিবীকে ৬টি প্রাণিভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত করেন। পরবর্তীতে ১৮৭৬ সালে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (A.R. Walles) মেরুদন্ডী প্রাণীদের বিস্তারের ওপর ভিত্তি স্কেলেটারের প্রাণীভৌগলিক অঞ্চলকে পরিবর্তনের মাধ্যমে একটা সহজবোধ্য ও সরল ছক প্রণয়ন করেন। নিম্নে ওয়ালেস প্রণীত ভৌগোলিক অঞ্চলসমূহের নাম ও তাদের অন্তর্ভুক্ত এলাকার নাম ছকের সাহায্যে দেখানো হলো-
প্রাণিভৌগোলিক অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত এলাকা
১. প্যালিআর্কটিক অঞ্চল: ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়া (দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া বাদে)
২. নিআর্কটিক অঞ্চল: উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ, গ্রীনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড।
৩. নিওট্রপিক্যাল অঞ্চল: সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা এবং অধিকাংশ মধ্য আমেরিকা।
৪. ইথিওপিয়ান অঞ্চল: সাহারার দক্ষিণমুখী আফ্রিকা এবং সংলগ্ন মাদাগাস্কার দ্বীপ।
৫. ওরিয়েন্টাল অঞ্চল: বেলুচিস্তান থেকে বার্মা পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং কিছু ইন্দোনেশীয় দ্বীপ।
৬. অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চল: অস্ট্রেলিয়া, তাসমেনিয়া, নিউজিল্যান্ড, নিউগিনি এবং ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাংশীয় দ্বীপগুলো।
উক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ওরিয়েন্টাল অঞ্চলে। ওরিয়েন্টাল অঞ্চলের ভৌগলিক বিস্তৃতি হলো পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান (ফরমোজা) এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও, বালি ইত্যাদি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু :
সমগ্র অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এ অঞ্চলের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিরক্ষীয় জলবায়ু দৃষ্ট হয়। সারাবছর অধিক তাপ ও বৃষ্টিপাত এ জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
অত্যধিক আর্দ্রতার কারণে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, ভ্যাপসা গরম ও গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করে। এ অঞ্চলে দিন-রাত্রি সব সময় সমান থাকে এবং সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে অধিক তাপ, বৃষ্টি দেখা যায় এবং শুষ্ক ও বৃষ্টিহীন শীতকালও এ জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
উদ্ভিদকুল :
অধিক উত্তাপ ও সারাবছর বৃষ্টিপাতের জন্যে নিরক্ষীয় অঞ্চলে চিরহরিৎ বৃক্ষের গভীর বন সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের বৃক্ষের মধ্যে, সেগুন, মেহগনি, আবলুশ, রোজউড, রবার, তাল, নারকেল প্রধান। মৌসুমি অঞ্চলেও চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এ সঙ্গে তৃণভূমি ও কাঁটা ঝোপ দেখা যায়। সমুদ্র উপকূলে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ।
প্রাণিকূল :
স্তন্যপায়ী : বাঘ, চিতাবাঘ, মর্মর বিড়াল, ভালুক, ভারতীয় হাতি, গন্ডার, ওরাংওটান, উড়–ক্ক লেমুর, কৃষ্ণসার, নীলগাই, বুনোমোষ, শুকুর, পা-া, হরিণ, হিসপিড খরখোস ও সিংহ উল্লেখযোগ্য। পাখী : ময়ূর, বনমোড়গ, নীল পাখি, মাছরাঙা, কোকিল, কবুতর, পেচা, শকুন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
সরিসৃপ : কুমির, ঘড়িয়াল, গোসাপ, তক্ষক, গোখরা, ক্যামেলিওন, কচ্ছপ ইত্যাদি।
উভয়র : কুনোব্যাঙ, সোনাব্যাঙ, গেছোব্যাঙ নিউট উল্লেখযোগ্য প্রভৃতি।
মৎস্য : প্রধান মাছ কার্প ও ক্যাটফিশ।