তরুণাস্থি কী? অস্থি ও তরুণাস্থি এর গঠন একই, নাকি ভিন্ন– জানতে চাই। তরুণাস্থির প্রকারভেদ বর্ণনা করুন।
তরুণাস্থি
দেহের অভ্যন্তরের নমনীয়, নরম ও স্থিতিস্থাপক যােজক কলাকে তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ বলে। এটি অস্থির মতো শক্ত নয়। তরুণাস্থিতে রক্তনালী থাকে না। তাই তরুণাস্থির বৃদ্ধি ও মেরামত ধীর গতিতে হয়। তরুণাস্থিতে স্নায়ুকোষও নেই। এটি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ব্যাথা অনুভূত হয় না। তবে তরুণাস্থি ভেঙ্গে গিয়ে যদি টেনডন ও মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ব্যাথা অনুভূত হবে। মানুষের নাক, কান, হিউমেরাস ও ফিমারের মস্তক, বিভিন্ন অস্থিসন্ধি,শ্বাসনালি,আন্তঃকশেরুকা চাকতি ইত্যাদিতে তরুণাস্থি থাকে।
গঠন
তরুনাস্থির ম্যাট্রিক্সকে কনড্রিন বলে। ইহা অর্ধকঠিন,নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক। কনড্রিন কনড্রোমিউকয়েড ও কনড্রোঅ্যালবুনয়েড নামক দু’ধরনের প্রােটিন নিয়ে গঠিত। তরুণাস্থির কোষকে কনড্রোসাইট বলে।কনড্রোসাইটগুলাে এককভাবে অথবা গুচ্ছাকারে ল্যাকুনা নামক গহ্বরে অবস্থান করে। তরুণাস্থি পেরিকন্ড্রিয়াম নামক আবরণীতে আবৃত থাকে। পেরিকন্ড্রিয়াম চকচকে সাদা,তাই সাধারণত তরুণাস্থিকে সাদা,নীলাভ এবং চকচকে দেখা যায়।
তরুণাস্থির প্রকারভেদ:
ম্যাট্রিক্সের গঠনের উপর ভিত্তি করে তরুণাস্থি ৪ প্রকার। যথা:
১। হায়ালিন বা স্বচ্ছ তরুণাস্থি:
তরুণাস্থির মাতৃকা স্বচ্ছ, দৃঢ়, স্থিতিস্থাপক, নমনীয় ও সমসত্ত্ব। এতে কোন তন্তু থাকে না। এরা পেরিকন্ড্রিয়াম আবরণে আবৃত থাকে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নাক, শ্বাসনালি ইত্যাদি এ ধরনের তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত।
২। পীত তন্তময় তরুণাস্থি :
এ তরুনাস্থির ম্যাট্রিক্স অস্বচ্ছ, দৃঢ়, স্থিতিস্থাপক, নমনীয় ও সমসত্ত্ব। ম্যাট্রিক্সে পীততন্তু জালকের মতাে ছড়ানাে থাকে। কর্ণছত্র, নাসিকার অগ্রভাগ, স্বরযন্ত্র ইত্যাদি এ ধরনের তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত।
৩। শ্বেততন্তুময় তরুণাস্থি :
এ কলার ম্যাট্রিক্সে অনেক শাখাহীন, সূক্ষ্ম ও সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত সাদা তন্তু থাকে। লিগামেন্টের সংযােগস্থলে, আন্তঃকশেরুকার চাকতির পিউবিস সিমফাইসিসে ইত্যাদি এ ধরনের তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত।
৪। চুনময় বা ক্যালসিফাইড তরুণাস্থি :
এটি এক বিশেষ ধরনের তরুণাস্থি। এক্ষেত্রে ম্যাট্রিক্সে প্রচুর ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকে। ফলে এ তরুণাস্থি ঘর্ষণ ও চাপজনিত আঘাত সহ্য করতে সক্ষম। হিউমেরাস ও ফিমারের মস্তকে ইত্যাদি এ ধরনের তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত।
তরুণাস্থির কাজ
- তরুণাস্থি বিভিন্ন অঙ্গের চাপ ও টান প্রতিরােধ করে।
- অস্থিসন্ধিতে এরা অস্থির প্রান্তভাগকে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে।