একই প্রজাতিভুক্ত কিছু প্রাণী বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বিশেষ শৃঙ্খলার সাথে একত্রে স্থায়ী ভাবে বসবাস করার ব্যবস্থাকে সমাজবদ্ধতা বলে। প্রাণিজগতের মধ্যে মৌমাছি, পিপড়া, বােলতা, উইপােকা, মাছ, পাখি ও স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে সমাজবদ্ধতা দেখা যায়। পতঙ্গদের মধ্যে সামাজিক প্রাণী হিসেবে মৌমাছি আমাদের কাছে অধিক পরিচিত।
মৌমাছির সামাজিক আচরণ ও সামাজিক সংগঠন:
মৌমাছির কলােনিতে তিন জাতের মৌমাছি থাকে। এরা হল-
১) রাণী মৌমাছি – যা একটি উর্বর মৌমাছি
২) পুরুষ মৌমাছি বা ড্রোন
৩) কর্মী বা বন্ধ্যা মৌমাছি
মৌমাছিদের শ্রমবণ্টন লক্ষ করা যায়। তিন ধরনের মৌমাছির দৈহিক গঠনে ভিন্নতা দেখা যায়। এদের এরূপ অবস্থাকে বহুরূপতা বলে।
রাণী মৌমাছির সামাজিক আচরণ:
রাণী মৌমাছি অধিকাংশ সময় মৌচাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কেবল সঙ্গম উড্ডয়নের সময় মৌচাক থেকে বের হয়ে আসে। এরা জীবনে একবার কয়েকশত পুরুষের সাথে সঙ্গমে অংশগ্রহণ করে অসংখ্য শুক্রাণু গ্রহণ করে যা সারা জীবন ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। সঙ্গমের পর রাণী মৌমাছি প্রতিদিন প্রায় ১৫০০-২০০০ ডিম পাড়ে। নিষিক্ত ডিম থেকে স্ত্রী এবং অনিষিক্ত ডিম থেকে পুরুষ মৌমাছি সৃষ্টি হয়।
পুরুষ মৌমাছির সামাজিক আচরণ:
এরা মৌচাকের অলস প্রকৃতির ও কোলাহল সৃষ্টিকারী সদস্য। এরা প্রতিরক্ষা বা খাদ্য সংগ্রহের কাজে অংশগ্রহণ করে না। এরা এমন অলস প্রকৃতির যে নিজের খাদ্য নিজে গ্রহণ করে না। কোন কারণে কর্মী মৌমাছি না খাওয়ালে এরা মারা যায়।
কর্মী মৌমাছির সামাজিক আচরণ:
কর্মী মৌমাছি মূলত মৌচাকের পরিচ্ছন্নতা, বাচচার যত্ন নেয়া, খাদ্য অন্বেষণ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করে। খাদ্য অন্বেষণকারী মৌমাছি মৌচাকের নিকটে দু’ধরনের নৃত্য (বৃত্তাকার নৃত্য ও ওয়াগটেল নৃত্য) প্রদর্শন করে অন্যান্য মৌমাছিদের খাদ্যের উৎস সম্পর্কে অবগত করে।